ঢাকা ০৫:৩৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

২০১৯ সালে রাজনীতি, চলচ্চিত্র, সাহিত্য ও সংস্কৃতি অঙ্গন থেকে হারিয়ে গেলেন যাঁরা

  • বার্তা কক্ষ
  • আপডেট সময় : ০৬:৩০:৫৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৯
  • ৭৪৪ বার পড়া হয়েছে

কালের পরিক্রমায় আরও একটি বছর শেষ হয়ে গেল। ২০১৯ সালে রাজনীতি, চলচ্চিত্র, সাহিত্য ও সংস্কৃতি অঙ্গনের অনেককে হারিয়েছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকজন:

০১। ইফতেখারুল আলম: বছরের শুরুতেই ৫ জানুয়ারি না ফেরার দেশে পাড়ি জমান ষাটের দশকের সিনেমার প্রখ্যাত প্রযোজক ইফতেখারুল আলম। দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত রোগসহ নানা রোগে ভুগছিলেন তিনি। তার বয়স হয়েছিল ৯১বছর। ১৯৬৪ সালে জহির রায়হানের পরিচালনায় তৎকালীন পাকিস্তানের প্রথম রঙিন ছবি ‘সঙ্গম’ নির্মিত হয় তার প্রযোজনায়। চলচ্চিত্র জগতের মানুষদের কাছে তিনি ইফতেখারুল আলম কিসলু নামে পরিচিত। ১৯৬৬ সালে রাজ্জাক-সুচন্দা জুটির প্রথম ছবি ‘বেহুলা’ নির্মিত হয় তাঁর প্রযোজনায়। স্বাধীনতার পর প্রথম মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ছবি ‘ওরা ১১জন’ও প্রযোজনা করেন তিনি। এছাড়া ‘আনোয়ারা’, ‘আলিবাবা’ ‘দুই পয়সার আলতা’, ‘সংসার’র মতো অসংখ্য ছবি প্রযোজনা করেছেন তিনি।

০২। আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল: একুশে পদকপ্রাপ্ত গীতিকার, সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল কোটি কোটি মানুষের হৃদয়ে শূন্যতা তৈরি করে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ২২ জানুয়ারি না ফেরার দেশে চলে যান। তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৩বছর।‘আমার সারা দেহ খেও গো মাটি এই চোখ দুটো মাটি খেও না’, ‘এই রেল লাইনের ধারে মেঠো পথটার পারে দাঁড়িয়ে এক মধ্যবয়সী নারী এখনো রয়েছে হাত বাড়িয়ে’, ‘সব কটা জানালা খুলে দাও না’-সহ তাঁর সৃষ্ট অসংখ্য কালজয়ী গান দেশের মানুষের বুকে চিরদিন বাজবে। রাষ্ট্রপতির পুরস্কার,জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল ১৯৭১ সালে কিশোর বয়সে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।

০৩। আল মাহমুদ: দেশের অন্যতম প্রধান কবি আল মাহমুদ ১৫ ফেব্রুয়ারি মারা যান। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৩বছর।মীর আব্দুস শুকুর আল মাহমুদ, যিনি আল মাহমুদ নামে পরিচিত, তিনি ছিলেন আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি। তিনি একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক, ছোটগল্প লেখক, শিশুসাহিত্যিক এবং সাংবাদিক ছিলেন। ১৯৫০ -এর দশকে যে কয়েকজন লেখক বাংলা ভাষা আন্দোলন, জাতীয়তাবাদ, রাজনীতি, অর্থনৈতিক নিপীড়ন এবং পশ্চিম পাকিস্তানি সরকার বিরোধী আন্দোলন নিয়ে লিখেছেন তাঁদের মধ্যে মাহমুদ একজন। লোক লোকান্তর, কালের কলস, সোনালী কাবিন, মায়াবী পর্দা দুলে ওঠো ইত্যাদি তাঁর উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ। কবি আল মাহমুদ তাঁর অনবদ্য গল্প ও উপন্যাসের জন্যও খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। বাংলা সাহিত্যে অসামান্য অবদান রাখার স্বীকৃতিস্বরূপ আল মাহমুদ একুশে পদক, বাংলা একাডেমি পুরস্কার এবং কবি জসিম উদ্দিন পুরস্কারে ভূষিত হন।

০৪। শাহনাজ রহমতউল্লাহ: কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী শাহনাজ রহমতউল্লাহ ২৩ মার্চ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ৬৭বছর বয়সে নিজ বাসায় ইন্তেকাল করেন। দীর্ঘ পঞ্চাশ বছরের সংগীত জীবনে ‘এক নদী রক্ত পেরিয়ে’,‘একবার যেতে দে না আমার ছোট্ট সোনার গাঁয়’,‘একতারা তুই দেশের কথা বল রে, এবার বল’,‘প্রথম বাংলাদেশ আমার শেষ বাংলাদেশ’ ‘আমায় যদি প্রশ্ন করে’, ‘যে ছিল দৃষ্টির সীমানায়’ সহ অসংখ্য কালজয়ী গান উপহার দিয়ে গেছেন তিনি। সংগীতে অবদানের জন্য তিনি একুশে পদক, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি পুরস্কারসহ অসংখ্য স্বীকৃতি পেয়েছেন।

০৫। আহমেদ কায়সার: ‘পাগল মন মন রে, মন কেন এতো কথা বলে’ জনপ্রিয় এই গানের গীতিকার আহমেদ কায়সার ১ এপ্রিল পটুয়াখালী জেলার চরখালী গ্রামে নিজ বাসভবনে মারা যান। তাঁর বয়স হয়েছিল ৬২বছর। পাগল মন গানটি ছাড়াও অনেক গানের গীতিকার তিনি। তার লেখা বইয়ের সংখ্যা অর্ধশত। উল্লেখযোগ্য বইগুলো হলো-‘ছন্দ ছড়ায় বঙ্গবন্ধু’, ‘ফুলগুলো পথে পথে’, ‘একটি হৃদযন্ত্রের ভ্রমণ কাহিনী’। তার সম্পাদিত ছড়া পত্রিকা ‘ছড়ার আসর’ ব্যাপক আলোচিত ছিল। লেখালেখির স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি একাধিক পুরস্কার লাভ করেন।

০৬। টেলি সামাদ: বাংলা চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় কৌতুক অভিনেতা টেলি সামাদ ৬ এপ্রিল মারা গেছেন। তার বয়স হয়েছিল ৭৪বছর। ১৯৭৩ সালে ‘কার বউ’ এর মাধ্যমে চলচ্চিত্রে অভিষেক হয় তাঁর। চার দশকে ৬০০ বাংলা চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন গুণী এই অভিনেতা। সত্তর ও আশির দশকের শক্তিমান এ অভিনেতার প্রকৃত নাম আবদুস সামাদ। অভিনয়ের জন্যই তিনি ‘টেলি’ উপাধি পান। শুধু অভিনয় নয়, গান ও ছবি আঁকাতেও ছিল তাঁর সমান পারদর্শিতা। আমজাদ হোসেন পরিচালিত ‘নয়নমনি’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন তিনি।

০৭। হাসিবুল ইসলাম মিজান: ১৮ এপ্রিল ৬২বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন চিত্র পরিচালক হাসিবুল ইসলাম মিজান। তাঁর পরিচালিত উল্লেখযোগ্য সিনেমাগুলোর মধ্যে রয়েছে- ‘প্রেমের কসম’ ‘আমার স্বপ্ন তুমি’ ‘জন্ম’ ‘কপাল’ ও ‘তুমি আছো হৃদয়ে’। প্রেমের কসম ছবি পরিচালনার মাধ্যমে চলচিত্রাঙ্গনে অভিষেক ঘটে তাঁর।

০৮। সালেহ আহমেদ: টেলিভিশন ও চলচ্চিত্রের বর্ষীয়ান অভিনেতা সালেহ আহমেদ গত ২৪ এপ্রিল রাজধানীর অ্যাপোলো হাসপাতালে মারা যান। তার বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর। ১৯৯১ সালে হুমায়ূন আহমেদের নাটক ও চলচ্চিত্রে নিয়মিত অভিনয় শুরু করেন। তিনি ধারাবাহিক ‘অয়োময়’ নাটক ও ১৯৯৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘আগুনের পরশমণি’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন।এই অভিনেতা স্বাধীনতা পদক লাভ করেন।

০৯। আনিসুর রহমান আনিস: কৌতুক অভিনেতা আনিসুর রহমান আনিস। ২৯ এপ্রিল রাজধানীর টিকাটুলীর অভয় দাস লেনের বাসায় তিনি ইন্তেকাল করেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৯বছর।১৯৬৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এইতো জীবন চলচ্চিত্রটি হল তার প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র।তিনি অসংখ্য ছবিতে অভিনয় করেছেন। তাঁর অভিনীত সর্বশেষ চলচ্চিত্র যেমন ‘জামাই তেমন বউ’। চলচ্চিত্রে অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি টেলিভিশন ও মঞ্চে অভিনয় করেছেন।বাংলাদেশের থিয়েটারাঙ্গনে নবাব সিরাজদ্দৌলা মঞ্চনাটকে গোলাম হোসেন চরিত্র রূপায়নের জন্য পরিচিত।আনিস চলচ্চিত্রে চিত্রসম্পাদক হিসেবে বহু ছবির কাজ করেন।

১০। সুবীর নন্দী: একুশে পদকপ্রাপ্ত বরেণ্য সংগীতশিল্পী সুবীর নন্দী গত ৭ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৬বছর।চার দশকে ক্যারিয়ারে তিনি প্রায় দুই হাজার ছবিতে গান করেন। সংগীতশিল্পী এন্ড্রু কিশোরের পর তিনিই দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ছবিতে গান গাওয়ার রেকর্ড করেন। এছাড়া ১৯৯৪ সালে সুবীর নন্দী হাউজ অব কমন্সে গান গেয়েছিলেন। তিনি পাঁচবার প্লেব্যাক গায়ক হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র উৎসব পুরস্কার লাভ করেন। ২০১৯ সালে সুবীর নন্দী বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মাননা ‘একুশে পদকে’ ভূষিত হন।

১১। মায়া ঘোষ: ১৯ মে মারা গেলেন অভিনেত্রী মায়া ঘোষ। ২০০০ সালে মায়া ঘোষের ক্যান্সার ধরা পড়ে। ২০০১ সালের ফেব্রুয়ারিতে কলকাতার সরোজ গুপ্ত ক্যান্সার হাসপাতালে তার চিকিৎসা শুরু হয়। ২০০৯ সালের দিকে অনেকটা সুস্থ হয়ে ওঠেন তিনি। এরপর কিডনি, লিভার ও হাঁটুর সমস্যা দেখা দেয়। এতসব সমস্যার সঙ্গে পেরে উঠেননি এই অভিনেত্রী। পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে ৬৯বছর বয়সে নিজেকে নিয়ে গেলেন অদেখা ভুবনে। তিনি মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত দুই শতাধিক নাটক ও চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন।

১২। খালিদ হোসেন: ২২ মে রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন বরেণ্য নজরুলসংগীত শিল্পী খালিদ হোসেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৮বছর। তিনি দীর্ঘদিন যাবৎ হৃদরোগসহ বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন। খালিদ হোসেনের গাওয়া নজরুল সংগীতের ছয়টি অ্যালবাম প্রকাশিত হয়েছে। তিনি ২০০০ সালে একুশে পদক পেয়েছেন। আরো পেয়েছেন নজরুল একাডেমি পদক, শিল্পকলা একাডেমি পদক, কলকাতা থেকে চুরুলিয়া পদকসহ অসংখ্য সম্মাননা।

১৩। মমতাজউদ্দীন আহমেদ: জুন মাসের ২ তারিখে সবাইকে ছেড়ে চিরবিদায় নিয়েছেন প্রখ্যাত নাট্যকার, অভিনেতা ও ভাষাসৈনিক মমতাজ উদ্দীন আহমদ। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৪বছর। তিনি বেশ কিছু জনপ্রিয় নাটক রচনা করেছেন। এছাড়া গল্প, গদ্য, প্রবন্ধ, রচনা ও গবেষণা ক্ষেত্রে তাঁর উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে। নাটক ও সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য তিনি ১৯৭৬ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ও ১৯৯৭ সালে একুশে পদক লাভ করেন।

১৪। নাজমুল হুদা মিন্টু: চলচ্চিত্র নির্মাতা নাজমুল হুদা মিন্টু গত ২ জুন মারা গেছেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৬বছর। ‘সূর্য ওঠার আগে’,‘চৌধুরী বাড়ী’,‘ডাক পিয়ন’,‘অনেক প্রেম অনেক জ্বালা’,‘দিনের পর দিন’,‘সংঘর্ষ’,‘মধুমালতি’,‘ঘরে বাইরে’ সহ বেশ কিছু সিনেমা নির্মাণ করেন তিনি।

১৫। এইচ এম এরশাদ: জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচএম এরশাদ ১৪ জুলাই ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৯বছর।তিনি সাবেক সেনাপ্রধান ও জাতীয় পার্টি নামীয় রাজনৈতিক দল গঠন করেন। তিনি ১৯৮৩ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ছিলেন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচনে তাঁর দল সংসদে প্রধান বিরোধী দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রংপুর-৩ আসন হতে তিনি জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন এবং তিনি একাদশ জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।

১৬। খলিলুর রহমান বাবর: চলচ্চিত্র অভিনেতা, প্রযোজক ও পরিচালক খলিলুর রহমান বাবর মারা যান ২৬ আগস্ট। তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৭ বছর। ‘বাংলার মুখ’, ‘রংবাজ’সহ তিন শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। মাঝে প্রযোজক ও পরিচালক হিসেবেও তিনি আত্মপ্রকাশ করেন।

১৭। মোহাম্মদ জাকির খান: রাজধানীর উত্তরায় আহসানিয়া মিশন ক্যানসার হাসপাতালে গত ১৮ অক্টোবর চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন নির্মাতা মোহাম্মদ জাকির খান। তার বয়স হয়েছিল ৫৬বছর। ‘মনের অজান্তে’, ‘মন চুরি’, ‘রাঙামন’, ‘চার অক্ষরের ভালবাসা’সহ ১১টি চলচ্চিত্র পরিচালনা করেছেন তিনি।তাঁর ‘অন্যায়ের প্রতিবাদ’, ‘স্বপ্নের মধ্যে তুমি’ সিনেমার কাজ চলমান রয়েছে।

১৮। কালিদাস কর্মকার: আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চিত্রশিল্পী কালিদাস কর্মকার গত ১৮ অক্টোবর না ফেরার দেশে পাড়ি জমান। তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর। গ্যালারি কসমসের একজন উপদেষ্টা ছিলেন কালিদাস কর্মকার। চারুকলায় অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে কালিদাস কর্মকার ২০১৬ সালে শিল্পকলা পদক ও ২০১৮ সালে একুশে পদকে ভূষিত হন। তার বিচিত্র সব শিল্পকর্ম দক্ষিণ এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ব্যাপকভাবে প্রদর্শিত হয়েছে।

১৯। হুমায়ূন সাধু: তরুণ নাট্য নির্মাতা ও অভিনেতা হুমায়ূন সাধু। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত কারণে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৫ অক্টোবর ৩৭ বছর বয়সে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। হুমায়ূন কবীর সাধু যিনি হুমায়ূন সাধু নামে পরিচিত একজন বাংলাদেশী চলচ্চিত্র অভিনেতা, নাট্য পরিচালক ও লেখক। তিনি মোস্তফা সারোয়ার ফারুকির নির্মিত মেইড ইন বাংলাদেশ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে চলচ্চিত্র জগতে পা রাখেন। নাট্য অভিনেতা হিসেবে তিনি একাধিক নাটক ও টেলিফিল্মে অভিনয় করেছেন। সিনেমা নির্মাণের স্বপ্ন দেখছিলেন তিনি। কিন্তু তার আগেই বিদায় নিতে হলো তাঁকে।

২০। সাদেক হোসেন খোকা: অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা ৪ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৭বছর। খোকা ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময়ে ছিলেন গেরিলা যোদ্ধা। তিনি মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিতে(ন্যাপ) যোগদানের মাধ্যমে রাজনীতিতে পা রাখেন। ২০০২ সালে তিনি ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হন। তিনি প্রায় ৯ বছর ধরে এ পদে দায়িত্ব পালন করেন।

২১। মঈন উদ্দিন খান বাদল: মুক্তিযোদ্ধা, বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ ও সংসদ সদস্য মঈন উদ্দিন খান বাদল গত ৭ নভেম্বর ভারতের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৭বছর। তিনি জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের(জাসদ) একাংশের কার্যকরী সভাপতি ছিলেন। চট্টগ্রাম -৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও) আসন থেকে তিনি তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে উঠে আসা বাদল ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। বাঙালিদের ওপর আক্রমণের জন্য পাকিস্তান থেকে আনা অস্ত্র চট্টগ্রাম বন্দরে সোয়াত জাহাজ থেকে খালাসের সময় প্রতিরোধের অন্যতম নেতৃত্বদাতা ছিলেন বাদল। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে বাদল সমাজতান্ত্রিক রাজনীতির প্রতি আকৃষ্ট হন। জাসদ, বাসদ হয়ে পুনরায় জাসদে আসেন।

২২। কালা আজিজ: জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেতা আজিজ। চলচ্চিত্রে ‘কালা আজিজ’ নামে পরিচিত ছিলেন গুণী এই শিল্পী। গত ২৩ নভেম্বর রাজধানীর উত্তরায় নিজ বাসায় মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৫বছর।কালা আজিজ ১৯৮৪ সালে কাজী হায়াৎ পরিচালিত ‘মনা পাগলা’ ছবিতে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে অভিনয়ের সাথে যুক্ত হন।এরপর তিনি অসংখ্য ছবিতে অভিনয় করেন।

২৩। সূচনা ডলি: অকালে চলে গেলেন মডেল, অভিনেত্রী সূচনা ডলি। তাঁর বয়স হয়েছিল মাত্র ৩৩বছর।কিডনি সমস্যার কারণে শুক্রবার ৫ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় রাজধানীর মগবাজারের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। সূচনা তাসমেরী তেলের বিজ্ঞাপন করে আলোচনায় আসেন। বিটিভির নাটকে নিয়মিত অভিনয় করেছেন। তিনি শিল্পকলা একাডেমির নিয়মিত নাচের শিল্পীও ছিলেন। মঞ্চে তার প্রাণবন্ত পারফর্মেন্স দর্শকদের মুগ্ধ করেছে।

২৪। মাহফুজুর রহমান খান: দশবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত চিত্রগ্রাহক মাহফুজুর রহমান খান। গত ৬ ডিসেম্বর রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৭০বছর। মাহফুজুর রহমান খান ছিলেন প্রখ্যাত চিত্রগ্রাহক আবদুল লতিফ বাচ্চুর শিষ্য। তার অধীনে সহকারী চিত্রগ্রাহক হিসেবে ১৯৭০ সালে ‘দর্পচূর্ণ’ ও ১৯৭১ সালে ‘স্বরলিপি’ চলচ্চিত্রে কাজ করেন। তিনি অসংখ্য ছবিতে কাজ করেছেন, পেয়েছেনও অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা।

২৫। পৃথ্বী রাজ: তরুণ শিল্পী, সুরকার, সংগীত পরিচালক পৃথ্বী রাজ ১৫ ডিসেম্বর নিজের স্টুডিও জিলাপিতে কাজ করার সময় মাত্র ৩৩বছর বয়সে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান। তাঁর পুরো নাম মো. পৃথ্বীরাজ চৌধুরী। বছরের শেষ দিকে শোকের মিছিলটা ভারী করে দিয়ে গেলেন তরুণ এই প্রিয়মুখ।

২৬। ফজলে হাসান আবেদ: ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদ চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২০ ডিসেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৩বছর।বাংলাদেশ ও এর বাইরে লাখ লাখ মানুষকে দারিদ্র্য থেকে মুক্তি দিতে ও মর্যাদা পেতে অসাধারণ অবদান রেখেছেন স্যার আবেদ। বাংলাদেশের ব্র্যাককে তিনি সারাবিশ্বে সবচেয়ে বড় ও সম্মানিত বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও) হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। গড়ে তুলেছেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়, ব্র্যাক ব্যাংক, বিকাশ ও আড়ংয়ের মতো খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠান। দরিদ্র জনগোষ্ঠীর বিশেষত নারী ও শিশু উন্নয়নে ভূমিকা রাখায় স্যার আবেদকে গত ২০ নভেম্বর নেদারল্যান্ডের রাজার পক্ষ থেকে নাইট হুড ‘অফিসার ইন দ্য অর্ডার অফ অরেঞ্জ-নাসাউ’ খেতাবে ভূষিত করা হয়। তিনি দারিদ্র্য বিমোচনে অসাধারণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১০ সালে ইংল্যান্ডের রানি কর্তৃক ‘নাইট’ উপাধিতে ভূষিত হন।

২৭। ডা. মো. ইউনুস আলী সরকার: গাইবান্ধা-৩ (সাদুল্লাপুর-পলাশবাড়ী) আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য ডা. মো. ইউনুস আলী সরকার ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৭ ডিসেম্বর ইন্তেকাল করেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৭বছর।ডা. মো. ইউনুস আলী সরকার সংসদীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সর্ম্পকিত স্থায়ী কমিটির সদস্য ছিলেন। তিনি ২০১৪ ও ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দুইবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এছাড়াও তিনি গত ১৬ বছর ধরে সাদুল্লাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।তিনি পেশায় একজন চিকিৎসক ছিলেন।

২৮। বাসুদেব ঘোষ: সর্বশেষ ২৯ ডিসেম্বর সুরকার-সংগীত পরিচালক বাসুদেব ঘোষ চির বিদায় নিয়ে না ফেরার দেশে চলে গেলেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৫১বছর। রাত ১১টার দিকে অসুস্থাবস্থায় বাসুদেবকে রাজধানীর বারডেম হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। বাসুদেব ঘোষের সুরে অন্যতম গানের মধ্যে রয়েছে ‘তোমার ওই মনটাকে একটা ধুলোমাখা পথ করে দাও’, ‘তুমি হারিয়ে যাওয়ার সময় আমায় সঙ্গে নিও’, ‘আমি খুঁজে বেড়াই আমার মা’, ‘এই করে কেটে গেল ১২টি বছর’, ‘দেহ মাদল’ প্রভৃতি। তার নিজের গাওয়া ‘বাজারে বাংলার ঢোল’ বেশ সাড়া ফেলেছিল সংগীতাঙ্গনে। তিনি নিজ উদ্যোগে কাজ করছিলেন ইতিহাসের সবচেয়ে বড় দেশাত্মবোধক গানের অ্যালবাম নিয়ে। এক হাজারটি দেশের গান নিয়ে সাজানো এই অ্যালবামে নাম রেখেছিলেন ‘সূর্যালোকে শাণিত প্রাণের গান’। যাতে এর মধ্যে কণ্ঠ দিয়েছেন শতাধিক শিল্পী। গান রেকর্ড করেছেন প্রায় ২৫০টি।

সম্পাদিত-

ট্যাগস :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

চিন্ময় কৃষ্ণের সমর্থকদের হামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী নিহত

২০১৯ সালে রাজনীতি, চলচ্চিত্র, সাহিত্য ও সংস্কৃতি অঙ্গন থেকে হারিয়ে গেলেন যাঁরা

আপডেট সময় : ০৬:৩০:৫৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৯

কালের পরিক্রমায় আরও একটি বছর শেষ হয়ে গেল। ২০১৯ সালে রাজনীতি, চলচ্চিত্র, সাহিত্য ও সংস্কৃতি অঙ্গনের অনেককে হারিয়েছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকজন:

০১। ইফতেখারুল আলম: বছরের শুরুতেই ৫ জানুয়ারি না ফেরার দেশে পাড়ি জমান ষাটের দশকের সিনেমার প্রখ্যাত প্রযোজক ইফতেখারুল আলম। দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত রোগসহ নানা রোগে ভুগছিলেন তিনি। তার বয়স হয়েছিল ৯১বছর। ১৯৬৪ সালে জহির রায়হানের পরিচালনায় তৎকালীন পাকিস্তানের প্রথম রঙিন ছবি ‘সঙ্গম’ নির্মিত হয় তার প্রযোজনায়। চলচ্চিত্র জগতের মানুষদের কাছে তিনি ইফতেখারুল আলম কিসলু নামে পরিচিত। ১৯৬৬ সালে রাজ্জাক-সুচন্দা জুটির প্রথম ছবি ‘বেহুলা’ নির্মিত হয় তাঁর প্রযোজনায়। স্বাধীনতার পর প্রথম মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ছবি ‘ওরা ১১জন’ও প্রযোজনা করেন তিনি। এছাড়া ‘আনোয়ারা’, ‘আলিবাবা’ ‘দুই পয়সার আলতা’, ‘সংসার’র মতো অসংখ্য ছবি প্রযোজনা করেছেন তিনি।

০২। আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল: একুশে পদকপ্রাপ্ত গীতিকার, সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল কোটি কোটি মানুষের হৃদয়ে শূন্যতা তৈরি করে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ২২ জানুয়ারি না ফেরার দেশে চলে যান। তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৩বছর।‘আমার সারা দেহ খেও গো মাটি এই চোখ দুটো মাটি খেও না’, ‘এই রেল লাইনের ধারে মেঠো পথটার পারে দাঁড়িয়ে এক মধ্যবয়সী নারী এখনো রয়েছে হাত বাড়িয়ে’, ‘সব কটা জানালা খুলে দাও না’-সহ তাঁর সৃষ্ট অসংখ্য কালজয়ী গান দেশের মানুষের বুকে চিরদিন বাজবে। রাষ্ট্রপতির পুরস্কার,জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল ১৯৭১ সালে কিশোর বয়সে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।

০৩। আল মাহমুদ: দেশের অন্যতম প্রধান কবি আল মাহমুদ ১৫ ফেব্রুয়ারি মারা যান। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৩বছর।মীর আব্দুস শুকুর আল মাহমুদ, যিনি আল মাহমুদ নামে পরিচিত, তিনি ছিলেন আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি। তিনি একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক, ছোটগল্প লেখক, শিশুসাহিত্যিক এবং সাংবাদিক ছিলেন। ১৯৫০ -এর দশকে যে কয়েকজন লেখক বাংলা ভাষা আন্দোলন, জাতীয়তাবাদ, রাজনীতি, অর্থনৈতিক নিপীড়ন এবং পশ্চিম পাকিস্তানি সরকার বিরোধী আন্দোলন নিয়ে লিখেছেন তাঁদের মধ্যে মাহমুদ একজন। লোক লোকান্তর, কালের কলস, সোনালী কাবিন, মায়াবী পর্দা দুলে ওঠো ইত্যাদি তাঁর উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ। কবি আল মাহমুদ তাঁর অনবদ্য গল্প ও উপন্যাসের জন্যও খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। বাংলা সাহিত্যে অসামান্য অবদান রাখার স্বীকৃতিস্বরূপ আল মাহমুদ একুশে পদক, বাংলা একাডেমি পুরস্কার এবং কবি জসিম উদ্দিন পুরস্কারে ভূষিত হন।

০৪। শাহনাজ রহমতউল্লাহ: কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী শাহনাজ রহমতউল্লাহ ২৩ মার্চ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ৬৭বছর বয়সে নিজ বাসায় ইন্তেকাল করেন। দীর্ঘ পঞ্চাশ বছরের সংগীত জীবনে ‘এক নদী রক্ত পেরিয়ে’,‘একবার যেতে দে না আমার ছোট্ট সোনার গাঁয়’,‘একতারা তুই দেশের কথা বল রে, এবার বল’,‘প্রথম বাংলাদেশ আমার শেষ বাংলাদেশ’ ‘আমায় যদি প্রশ্ন করে’, ‘যে ছিল দৃষ্টির সীমানায়’ সহ অসংখ্য কালজয়ী গান উপহার দিয়ে গেছেন তিনি। সংগীতে অবদানের জন্য তিনি একুশে পদক, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি পুরস্কারসহ অসংখ্য স্বীকৃতি পেয়েছেন।

০৫। আহমেদ কায়সার: ‘পাগল মন মন রে, মন কেন এতো কথা বলে’ জনপ্রিয় এই গানের গীতিকার আহমেদ কায়সার ১ এপ্রিল পটুয়াখালী জেলার চরখালী গ্রামে নিজ বাসভবনে মারা যান। তাঁর বয়স হয়েছিল ৬২বছর। পাগল মন গানটি ছাড়াও অনেক গানের গীতিকার তিনি। তার লেখা বইয়ের সংখ্যা অর্ধশত। উল্লেখযোগ্য বইগুলো হলো-‘ছন্দ ছড়ায় বঙ্গবন্ধু’, ‘ফুলগুলো পথে পথে’, ‘একটি হৃদযন্ত্রের ভ্রমণ কাহিনী’। তার সম্পাদিত ছড়া পত্রিকা ‘ছড়ার আসর’ ব্যাপক আলোচিত ছিল। লেখালেখির স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি একাধিক পুরস্কার লাভ করেন।

০৬। টেলি সামাদ: বাংলা চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় কৌতুক অভিনেতা টেলি সামাদ ৬ এপ্রিল মারা গেছেন। তার বয়স হয়েছিল ৭৪বছর। ১৯৭৩ সালে ‘কার বউ’ এর মাধ্যমে চলচ্চিত্রে অভিষেক হয় তাঁর। চার দশকে ৬০০ বাংলা চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন গুণী এই অভিনেতা। সত্তর ও আশির দশকের শক্তিমান এ অভিনেতার প্রকৃত নাম আবদুস সামাদ। অভিনয়ের জন্যই তিনি ‘টেলি’ উপাধি পান। শুধু অভিনয় নয়, গান ও ছবি আঁকাতেও ছিল তাঁর সমান পারদর্শিতা। আমজাদ হোসেন পরিচালিত ‘নয়নমনি’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন তিনি।

০৭। হাসিবুল ইসলাম মিজান: ১৮ এপ্রিল ৬২বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন চিত্র পরিচালক হাসিবুল ইসলাম মিজান। তাঁর পরিচালিত উল্লেখযোগ্য সিনেমাগুলোর মধ্যে রয়েছে- ‘প্রেমের কসম’ ‘আমার স্বপ্ন তুমি’ ‘জন্ম’ ‘কপাল’ ও ‘তুমি আছো হৃদয়ে’। প্রেমের কসম ছবি পরিচালনার মাধ্যমে চলচিত্রাঙ্গনে অভিষেক ঘটে তাঁর।

০৮। সালেহ আহমেদ: টেলিভিশন ও চলচ্চিত্রের বর্ষীয়ান অভিনেতা সালেহ আহমেদ গত ২৪ এপ্রিল রাজধানীর অ্যাপোলো হাসপাতালে মারা যান। তার বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর। ১৯৯১ সালে হুমায়ূন আহমেদের নাটক ও চলচ্চিত্রে নিয়মিত অভিনয় শুরু করেন। তিনি ধারাবাহিক ‘অয়োময়’ নাটক ও ১৯৯৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘আগুনের পরশমণি’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন।এই অভিনেতা স্বাধীনতা পদক লাভ করেন।

০৯। আনিসুর রহমান আনিস: কৌতুক অভিনেতা আনিসুর রহমান আনিস। ২৯ এপ্রিল রাজধানীর টিকাটুলীর অভয় দাস লেনের বাসায় তিনি ইন্তেকাল করেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৯বছর।১৯৬৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এইতো জীবন চলচ্চিত্রটি হল তার প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র।তিনি অসংখ্য ছবিতে অভিনয় করেছেন। তাঁর অভিনীত সর্বশেষ চলচ্চিত্র যেমন ‘জামাই তেমন বউ’। চলচ্চিত্রে অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি টেলিভিশন ও মঞ্চে অভিনয় করেছেন।বাংলাদেশের থিয়েটারাঙ্গনে নবাব সিরাজদ্দৌলা মঞ্চনাটকে গোলাম হোসেন চরিত্র রূপায়নের জন্য পরিচিত।আনিস চলচ্চিত্রে চিত্রসম্পাদক হিসেবে বহু ছবির কাজ করেন।

১০। সুবীর নন্দী: একুশে পদকপ্রাপ্ত বরেণ্য সংগীতশিল্পী সুবীর নন্দী গত ৭ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৬বছর।চার দশকে ক্যারিয়ারে তিনি প্রায় দুই হাজার ছবিতে গান করেন। সংগীতশিল্পী এন্ড্রু কিশোরের পর তিনিই দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ছবিতে গান গাওয়ার রেকর্ড করেন। এছাড়া ১৯৯৪ সালে সুবীর নন্দী হাউজ অব কমন্সে গান গেয়েছিলেন। তিনি পাঁচবার প্লেব্যাক গায়ক হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র উৎসব পুরস্কার লাভ করেন। ২০১৯ সালে সুবীর নন্দী বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মাননা ‘একুশে পদকে’ ভূষিত হন।

১১। মায়া ঘোষ: ১৯ মে মারা গেলেন অভিনেত্রী মায়া ঘোষ। ২০০০ সালে মায়া ঘোষের ক্যান্সার ধরা পড়ে। ২০০১ সালের ফেব্রুয়ারিতে কলকাতার সরোজ গুপ্ত ক্যান্সার হাসপাতালে তার চিকিৎসা শুরু হয়। ২০০৯ সালের দিকে অনেকটা সুস্থ হয়ে ওঠেন তিনি। এরপর কিডনি, লিভার ও হাঁটুর সমস্যা দেখা দেয়। এতসব সমস্যার সঙ্গে পেরে উঠেননি এই অভিনেত্রী। পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে ৬৯বছর বয়সে নিজেকে নিয়ে গেলেন অদেখা ভুবনে। তিনি মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত দুই শতাধিক নাটক ও চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন।

১২। খালিদ হোসেন: ২২ মে রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন বরেণ্য নজরুলসংগীত শিল্পী খালিদ হোসেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৮বছর। তিনি দীর্ঘদিন যাবৎ হৃদরোগসহ বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন। খালিদ হোসেনের গাওয়া নজরুল সংগীতের ছয়টি অ্যালবাম প্রকাশিত হয়েছে। তিনি ২০০০ সালে একুশে পদক পেয়েছেন। আরো পেয়েছেন নজরুল একাডেমি পদক, শিল্পকলা একাডেমি পদক, কলকাতা থেকে চুরুলিয়া পদকসহ অসংখ্য সম্মাননা।

১৩। মমতাজউদ্দীন আহমেদ: জুন মাসের ২ তারিখে সবাইকে ছেড়ে চিরবিদায় নিয়েছেন প্রখ্যাত নাট্যকার, অভিনেতা ও ভাষাসৈনিক মমতাজ উদ্দীন আহমদ। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৪বছর। তিনি বেশ কিছু জনপ্রিয় নাটক রচনা করেছেন। এছাড়া গল্প, গদ্য, প্রবন্ধ, রচনা ও গবেষণা ক্ষেত্রে তাঁর উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে। নাটক ও সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য তিনি ১৯৭৬ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ও ১৯৯৭ সালে একুশে পদক লাভ করেন।

১৪। নাজমুল হুদা মিন্টু: চলচ্চিত্র নির্মাতা নাজমুল হুদা মিন্টু গত ২ জুন মারা গেছেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৬বছর। ‘সূর্য ওঠার আগে’,‘চৌধুরী বাড়ী’,‘ডাক পিয়ন’,‘অনেক প্রেম অনেক জ্বালা’,‘দিনের পর দিন’,‘সংঘর্ষ’,‘মধুমালতি’,‘ঘরে বাইরে’ সহ বেশ কিছু সিনেমা নির্মাণ করেন তিনি।

১৫। এইচ এম এরশাদ: জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচএম এরশাদ ১৪ জুলাই ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৯বছর।তিনি সাবেক সেনাপ্রধান ও জাতীয় পার্টি নামীয় রাজনৈতিক দল গঠন করেন। তিনি ১৯৮৩ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ছিলেন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচনে তাঁর দল সংসদে প্রধান বিরোধী দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রংপুর-৩ আসন হতে তিনি জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন এবং তিনি একাদশ জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।

১৬। খলিলুর রহমান বাবর: চলচ্চিত্র অভিনেতা, প্রযোজক ও পরিচালক খলিলুর রহমান বাবর মারা যান ২৬ আগস্ট। তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৭ বছর। ‘বাংলার মুখ’, ‘রংবাজ’সহ তিন শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। মাঝে প্রযোজক ও পরিচালক হিসেবেও তিনি আত্মপ্রকাশ করেন।

১৭। মোহাম্মদ জাকির খান: রাজধানীর উত্তরায় আহসানিয়া মিশন ক্যানসার হাসপাতালে গত ১৮ অক্টোবর চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন নির্মাতা মোহাম্মদ জাকির খান। তার বয়স হয়েছিল ৫৬বছর। ‘মনের অজান্তে’, ‘মন চুরি’, ‘রাঙামন’, ‘চার অক্ষরের ভালবাসা’সহ ১১টি চলচ্চিত্র পরিচালনা করেছেন তিনি।তাঁর ‘অন্যায়ের প্রতিবাদ’, ‘স্বপ্নের মধ্যে তুমি’ সিনেমার কাজ চলমান রয়েছে।

১৮। কালিদাস কর্মকার: আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চিত্রশিল্পী কালিদাস কর্মকার গত ১৮ অক্টোবর না ফেরার দেশে পাড়ি জমান। তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর। গ্যালারি কসমসের একজন উপদেষ্টা ছিলেন কালিদাস কর্মকার। চারুকলায় অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে কালিদাস কর্মকার ২০১৬ সালে শিল্পকলা পদক ও ২০১৮ সালে একুশে পদকে ভূষিত হন। তার বিচিত্র সব শিল্পকর্ম দক্ষিণ এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ব্যাপকভাবে প্রদর্শিত হয়েছে।

১৯। হুমায়ূন সাধু: তরুণ নাট্য নির্মাতা ও অভিনেতা হুমায়ূন সাধু। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত কারণে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৫ অক্টোবর ৩৭ বছর বয়সে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। হুমায়ূন কবীর সাধু যিনি হুমায়ূন সাধু নামে পরিচিত একজন বাংলাদেশী চলচ্চিত্র অভিনেতা, নাট্য পরিচালক ও লেখক। তিনি মোস্তফা সারোয়ার ফারুকির নির্মিত মেইড ইন বাংলাদেশ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে চলচ্চিত্র জগতে পা রাখেন। নাট্য অভিনেতা হিসেবে তিনি একাধিক নাটক ও টেলিফিল্মে অভিনয় করেছেন। সিনেমা নির্মাণের স্বপ্ন দেখছিলেন তিনি। কিন্তু তার আগেই বিদায় নিতে হলো তাঁকে।

২০। সাদেক হোসেন খোকা: অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা ৪ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৭বছর। খোকা ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময়ে ছিলেন গেরিলা যোদ্ধা। তিনি মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিতে(ন্যাপ) যোগদানের মাধ্যমে রাজনীতিতে পা রাখেন। ২০০২ সালে তিনি ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হন। তিনি প্রায় ৯ বছর ধরে এ পদে দায়িত্ব পালন করেন।

২১। মঈন উদ্দিন খান বাদল: মুক্তিযোদ্ধা, বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ ও সংসদ সদস্য মঈন উদ্দিন খান বাদল গত ৭ নভেম্বর ভারতের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৭বছর। তিনি জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের(জাসদ) একাংশের কার্যকরী সভাপতি ছিলেন। চট্টগ্রাম -৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও) আসন থেকে তিনি তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে উঠে আসা বাদল ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। বাঙালিদের ওপর আক্রমণের জন্য পাকিস্তান থেকে আনা অস্ত্র চট্টগ্রাম বন্দরে সোয়াত জাহাজ থেকে খালাসের সময় প্রতিরোধের অন্যতম নেতৃত্বদাতা ছিলেন বাদল। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে বাদল সমাজতান্ত্রিক রাজনীতির প্রতি আকৃষ্ট হন। জাসদ, বাসদ হয়ে পুনরায় জাসদে আসেন।

২২। কালা আজিজ: জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেতা আজিজ। চলচ্চিত্রে ‘কালা আজিজ’ নামে পরিচিত ছিলেন গুণী এই শিল্পী। গত ২৩ নভেম্বর রাজধানীর উত্তরায় নিজ বাসায় মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৫বছর।কালা আজিজ ১৯৮৪ সালে কাজী হায়াৎ পরিচালিত ‘মনা পাগলা’ ছবিতে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে অভিনয়ের সাথে যুক্ত হন।এরপর তিনি অসংখ্য ছবিতে অভিনয় করেন।

২৩। সূচনা ডলি: অকালে চলে গেলেন মডেল, অভিনেত্রী সূচনা ডলি। তাঁর বয়স হয়েছিল মাত্র ৩৩বছর।কিডনি সমস্যার কারণে শুক্রবার ৫ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় রাজধানীর মগবাজারের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। সূচনা তাসমেরী তেলের বিজ্ঞাপন করে আলোচনায় আসেন। বিটিভির নাটকে নিয়মিত অভিনয় করেছেন। তিনি শিল্পকলা একাডেমির নিয়মিত নাচের শিল্পীও ছিলেন। মঞ্চে তার প্রাণবন্ত পারফর্মেন্স দর্শকদের মুগ্ধ করেছে।

২৪। মাহফুজুর রহমান খান: দশবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত চিত্রগ্রাহক মাহফুজুর রহমান খান। গত ৬ ডিসেম্বর রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৭০বছর। মাহফুজুর রহমান খান ছিলেন প্রখ্যাত চিত্রগ্রাহক আবদুল লতিফ বাচ্চুর শিষ্য। তার অধীনে সহকারী চিত্রগ্রাহক হিসেবে ১৯৭০ সালে ‘দর্পচূর্ণ’ ও ১৯৭১ সালে ‘স্বরলিপি’ চলচ্চিত্রে কাজ করেন। তিনি অসংখ্য ছবিতে কাজ করেছেন, পেয়েছেনও অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা।

২৫। পৃথ্বী রাজ: তরুণ শিল্পী, সুরকার, সংগীত পরিচালক পৃথ্বী রাজ ১৫ ডিসেম্বর নিজের স্টুডিও জিলাপিতে কাজ করার সময় মাত্র ৩৩বছর বয়সে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান। তাঁর পুরো নাম মো. পৃথ্বীরাজ চৌধুরী। বছরের শেষ দিকে শোকের মিছিলটা ভারী করে দিয়ে গেলেন তরুণ এই প্রিয়মুখ।

২৬। ফজলে হাসান আবেদ: ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদ চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২০ ডিসেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৩বছর।বাংলাদেশ ও এর বাইরে লাখ লাখ মানুষকে দারিদ্র্য থেকে মুক্তি দিতে ও মর্যাদা পেতে অসাধারণ অবদান রেখেছেন স্যার আবেদ। বাংলাদেশের ব্র্যাককে তিনি সারাবিশ্বে সবচেয়ে বড় ও সম্মানিত বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও) হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। গড়ে তুলেছেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়, ব্র্যাক ব্যাংক, বিকাশ ও আড়ংয়ের মতো খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠান। দরিদ্র জনগোষ্ঠীর বিশেষত নারী ও শিশু উন্নয়নে ভূমিকা রাখায় স্যার আবেদকে গত ২০ নভেম্বর নেদারল্যান্ডের রাজার পক্ষ থেকে নাইট হুড ‘অফিসার ইন দ্য অর্ডার অফ অরেঞ্জ-নাসাউ’ খেতাবে ভূষিত করা হয়। তিনি দারিদ্র্য বিমোচনে অসাধারণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১০ সালে ইংল্যান্ডের রানি কর্তৃক ‘নাইট’ উপাধিতে ভূষিত হন।

২৭। ডা. মো. ইউনুস আলী সরকার: গাইবান্ধা-৩ (সাদুল্লাপুর-পলাশবাড়ী) আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য ডা. মো. ইউনুস আলী সরকার ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৭ ডিসেম্বর ইন্তেকাল করেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৭বছর।ডা. মো. ইউনুস আলী সরকার সংসদীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সর্ম্পকিত স্থায়ী কমিটির সদস্য ছিলেন। তিনি ২০১৪ ও ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দুইবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এছাড়াও তিনি গত ১৬ বছর ধরে সাদুল্লাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।তিনি পেশায় একজন চিকিৎসক ছিলেন।

২৮। বাসুদেব ঘোষ: সর্বশেষ ২৯ ডিসেম্বর সুরকার-সংগীত পরিচালক বাসুদেব ঘোষ চির বিদায় নিয়ে না ফেরার দেশে চলে গেলেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৫১বছর। রাত ১১টার দিকে অসুস্থাবস্থায় বাসুদেবকে রাজধানীর বারডেম হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। বাসুদেব ঘোষের সুরে অন্যতম গানের মধ্যে রয়েছে ‘তোমার ওই মনটাকে একটা ধুলোমাখা পথ করে দাও’, ‘তুমি হারিয়ে যাওয়ার সময় আমায় সঙ্গে নিও’, ‘আমি খুঁজে বেড়াই আমার মা’, ‘এই করে কেটে গেল ১২টি বছর’, ‘দেহ মাদল’ প্রভৃতি। তার নিজের গাওয়া ‘বাজারে বাংলার ঢোল’ বেশ সাড়া ফেলেছিল সংগীতাঙ্গনে। তিনি নিজ উদ্যোগে কাজ করছিলেন ইতিহাসের সবচেয়ে বড় দেশাত্মবোধক গানের অ্যালবাম নিয়ে। এক হাজারটি দেশের গান নিয়ে সাজানো এই অ্যালবামে নাম রেখেছিলেন ‘সূর্যালোকে শাণিত প্রাণের গান’। যাতে এর মধ্যে কণ্ঠ দিয়েছেন শতাধিক শিল্পী। গান রেকর্ড করেছেন প্রায় ২৫০টি।

সম্পাদিত-