নিজস্ব প্রতিবেদক: ফেসবুক আলোচিত ব্যক্তিত্ব বিশিষ্ট আইনজীবী ব্যারিষ্টার সায়েদুল হক সুমনের করা লাইভ-এর পর সেই স্কুলটি দ্রুত নির্মানের জন্য আর্থিকভাবে অনুদান করেন শরীয়তপুর-১ আসনের স্থানীয় সংসদ সদস্য ইকবাল হোসেন অপু এমপি ও শরীয়তপুর জেলা প্রশাসক কাজী আবু তাহের।
এর আগে, শরীয়তপুরের জনপ্রিয় জেলা ভিত্তিক অনলাইন নিউজ পোটাল শরীয়তপুর পরিক্রমায় গত ২১ এপ্রিল “শরীয়তপুরে গাছতলায় পাঠদান, বৃষ্টি নামলেই ছুটি” শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশ করলে, হাইকোর্টের আইনজীবী এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনের নজরে আসলে সেখানে তিনি পরিদর্শনে আসেন।
২৩ এপ্রিল (২০১৯) সকালে তিনি শরীয়তপুর সদর উপজেলার ডোমসার ইউনিয়নের চর ডোমসার বে-সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনে এসে তিনি স্কুল চলাকালীন সময় শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে ফেসবুক ভিডিও রেকর্ডিং লাইভে আসেন। লাইভে তিনি স্কুলের সমসাময়িক সমস্যার বিষয়গুলো তুলে ধরেন। তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেইজ ও শরীয়তপুর পরিক্রমার ফেসবুক পেইজে ভিডিওটি শেয়ার করলে মুহুর্তের মধ্যেই ভাইরাল হয়ে যায়।
লাইভে এসে ভিডিও বার্তায় সাইদুল ইসলাম সুমন বলেন, আগামী পনেরো দিনের মধ্যে কর্তৃপক্ষ স্কুল ভবন নির্মাণ না করলে, তার বেতনের টাকা দিয়ে হলেও স্কুলের উন্নয়নের জন্য কাজ করে দিবেন বলে ঘোষণা দেন তিনি।
লাইভের ২০ মিনিট পরেই স্থানীয় সংসদ সদস্য ইকবাল হোসেন অপু ব্যারিস্টার সুমনের সাথে ফোনে যোগাযোগ করেন এবং তিনি বলেন, স্কুলের বিষটি তার জানা ছিলো না। এছাড়া কেউ তাকে এই বিষয়ে অবগতও করেননি। দ্রুত বিদ্যালয়টি নির্মান করে দিবেন বলেও জানান তিনি। এরেই প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার স্কুলের নির্মান কাজের জন্য নগদ ১ লক্ষ টাকা অনুদান করেন এমপি। শরীয়তপুর জেলা প্রশাসক কাজী আবু তাহের জেলা প্রশাসেনের পক্ষ থেকে স্কুল নির্মানের জন্য ১০ বান টিন ও নগদ প্রায় ৫০ হাজার টাকা অনুদান দেন।
ব্যারিস্টার সুমন লাইভ-এ আসার আগে শরীয়তপুর সদর উপজেলার নির্বাহী অফিসারের দেওয়া ৪৪ হাজার টাকা দিয়ে স্কুলের নির্মান কাজ শুরু হলেও। বর্তমানে টাকার পরিমান কয়েকগুণ বেড়ে গেছে।
বিদ্যালয়টির ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ফারজানা আক্তার নিজের অনুভূতি প্রকাশ করে তিনি বলেন, স্থানীয় সাংবাদিক ও ঢাকার সাংবাদিকরা সংবাদ প্রকাশ করার কারনে এবং ব্যারিস্টার সুমন সাহেব সরোজমিনে এসে স্কুলটির সমস্যা তুলে ধরায় দ্রুত গতিতে বিদ্যালয়টির নির্মান কাজ শুরু হয়েছে যা কিছু দিন এটা ছিলো কল্পনা। স্থানীয় এমপি, উপজেলা ও জেলা প্রশাসন আর্থিকভাবে অনুদান দিয়েছেন। তিনি বলেন, দীর্ঘ দিন ধরে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হলেও এখন পযর্ন্ত এমপিওভুক্ত হয়নি। আশা করি এবার বিদ্যালয়টিও এমপিওভুক্ত হবে। এটা এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের জোড় অনুরোধও।
ডোমসার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান চাঁন মিয়া মাদবর বলেন, ব্যারিস্টার সুমন সাহেব এই বিদ্যালয়টি পরিদর্শনে আসার পর ইকবাল হোসেন অপু এমপি ও ডিসি কাজী আবু তাহের মহোদয় দুজনে নগদ দেড় লক্ষ টাকা ও ১০ বান টিন দিয়েছেন। আশা করি ভবনের নির্মান কাজ হয়ে যাবে। স্কুল ভবনটি নির্মান করতে প্রায় চার থেকে পাচঁ লাখ টাকা লাগবে বলেও জানান তিনি।তিনি আরও কিছু সমস্যার কথা তুলে ধরে বলেন, স্কুল ঘরটি ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়াতে পাঠদানের জন্য ভালো পড়ার টেবিল, ব্লাক ব্লাক বোর্ড নেই। সব নতুন করে বানাতে আরও প্রায় ১ লক্ষ টাকার মত লাগবে।
বর্তমান সরকারের উন্নয়নের সময় স্কুলের এমন দৈন্য দশার সংবাদ দেখে শরীয়তপুরের দুবাই প্রবাসী জসিম রাজেক ও ঢাকায় ডা: পেশায় কর্মরত ডা: আব্দুর রাজ্জাক আর্থিকভাবে সাহায্য করার আশ্বাস দেন। তারা বলেন, স্কুলের নির্মান কাজ শেষ হলে স্কুলের আসবাবপত্র ক্রয় করতে যতটাকা লাগবে স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধির সাথে যোগাযোগ করে অনুদান দিবেন বলে এই প্রতিবেদককে জানান।
প্রসঙ্গত, শরীয়তপুর সদর উপজেলার ডোমসার ইউনিয়নের চর ডোমসার, ভাসকদ্দি ও বেদেপল্লী গ্রামে স্কুল না থাকা গ্রামগুলোর মানুষের কথা চিন্তা করে ১৯৭০ সালে স্থানীয় সিরাজুল হক মোল্লা বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। পরে ২০০৩ সাল থেকে বিদ্যালয়টিতে নিয়মিতভাবে পাঠদান শুরু হয়। গত ৬ এপ্রিল (শনিবার) সন্ধ্যায় কালবৈশাখী ঝড়ে বিদ্যালয়ের টিনের ঘরটি লণ্ডভণ্ড হয়ে পড়ে। সেই থেকে খোলা আকাশের নিচে গাছতলায় ক্লাস করতে হচ্ছে। প্রতি বছরই স্কুলঘরটি ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিদ্যালয়ে বর্তমান শিক্ষার্থী ১৫০ জন। ভবন না থাকায় প্রতি বছরেই শিক্ষার্থী কমছে। বিদ্যালয় শিক্ষক আছেন মাত্র তিনজন ।