ঢাকা ০১:৫৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৮ জুলাই ২০২৫, ২৩ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

লোহাগড়ায় খোলা আকাশের নিচে বাতাসি স. প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষার্থীদের পাঠদান

  • বার্তা কক্ষ
  • আপডেট সময় : ১১:০৪:৩৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২০
  • ৩৩৮ বার পড়া হয়েছে

নিউজ ডেস্ক: নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার শালনগর ইউনিয়নের ১৯৫০ সালে স্থানীয় সাত গ্রামের মানুষের চেষ্টায় ভদ্রডাঙ্গা বাতাসি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করা হয়। প্রায় ৭০ বছর আগের বিদ্যালয়টি গত বছর মে মাসে নূতন ভবন নির্মাণের জন্য পুরাতন ঘরটি ভেঙে ফেলা হয়। তখন থেকে খোলা আকাশের নিচে শিক্ষার্থীদের পাঠদান চলছে।
আপাতত ক্লাস নেয়ার জন্য ন্যূনতম একটি ঘর তৈরির কার্যাদেশ থাকলেও ঠিকাদার তা করে দেননি। ৯ মাসে নতুন ভবন তৈরির কাজটি শেষ করার কথা থাকলেও মেয়াদ শেষ হয়েছে ৩ জানুয়ারি। এখন কেবলমাত্র ভিত ঢালাই হয়েছে।
ঠিকাদারের অনিয়ম, দুর্নীতি ও গাফিলতির জন্য যথাসময়ে বিদ্যালয়ের নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি বলে অভিযোগ স্থানীয় এলাকাবাসি ও শিক্ষক-শিক্ষার্থীর। এতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বিপাকে পড়েছেন এবং সার্বিকভাবে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
বিদ্যালয় সূত্র জানায়, এলজিইডির চাহিদা ভিত্তিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় নতুন এ ভবনটি নির্মাণ করা হচ্ছে। চারতলা ভিত্তির এ ভবনটি বর্তমানে হবে পাঁচ কক্ষের একতলা ভবন। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৩ লাখ ৬৮ হাজার ৭৭৬ টাকা। কার্যাদেশ দেয়া হয় গত বছর ৪ এপ্রিল। এ প্রকল্পের কাজ শেষ করার মেয়াদ ছিল ৩ জানুয়ারি।
নড়াইলের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এস এম আলমগীর কবির এ প্রকল্পের ঠিকাদার। তবে নতুন ভবন নির্মানে কেন দেরি হচ্ছে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা কোন সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেননি তিনি।
সংশ্লিষ্ট দপ্তর সূত্র জানায়, শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেয়ার জন্য একটি টিনশেড ঘর তৈরি করতে ওই প্রকল্পের বরাদ্দের মধ্যে ১ লাখ ১৬ হাজার টাকা ধরা আছে। ঠিকাদার সেটি করেননি। বরাদ্দের টাকা দিয়ে ওই ঘরটি তৈরি করে দিলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ অনেকাংশ কমে যেতো। পুরাতন টিনশেড ঘরের জরাজীর্ণ টিন খুলে তা দিয়ে ছাপড়া দেয়া হয়েছে।
মুল ঠিকাদার কাজটি লোহাগড়া উপজেলার লাহুড়িয়ার ঠিকাদার কামরুজ্জামানের কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন। ওই ঠিকাদারের যথা সময়ে অনেক প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন না করার অতীত বদনাম রয়েছে। তাই এ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও ভবন নির্মাণ কাজের কোনো অগ্রগতি হয়নি। গত ছয় মাস যাবৎ এ কাজ একদমই বন্ধ ছিল। গত নভেম্বর মাসে প্রকল্পের কাজ শুরু হলেও তার তেমন কোনো অগ্রগতি নেই।
এ প্রসঙ্গে বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আছরা খাতুন জানান, শিশু শ্রেণির জন্য আলাদা শ্রেণিকক্ষ রাখার নির্দেশনা আছে। তবে সেটি হচ্ছে না। খোলা আকাশের নিচে শিক্ষার্থীদের পাঠদান ও পরীক্ষায় মনোযোগ নষ্ট হচ্ছে। এ অবস্থায় শিক্ষার প্রতি কোমলমতি শিশুদের নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী রাব্বি, রাখি তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী নূপুর, দিদারসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়, মাঝে মধ্যে সামান্য বাতাসে ধুলা-বালিতে চোখ-মুখ ভরে যায়। এছাড়াও বই-খাতা উড়ে যায়। মাটিতে নিচু হয়ে লেখা যায় না। তাই স্কুলে আসতে মন চায় না।
ঠিকাদারের নিয়োজিত ব্যবস্থাপক পলাশ মোল্লা জানান, গত বছর মে মাসে বিদ্যালয় ভবনটির ভিত ঢালাই দেয়ার জন্য মাটি খোঁড়া হয়। বর্ষায় কাঁচা রাস্তা দিয়ে মালামালও আনা সম্ভব হয়নি। তাই কাজ শুরু করা যায়নি।
উপজেলা প্রকৌশলী অভিজিৎ মজুমদার জানান, গত বর্ষায় মৌসুমে কাজ করা যায়নি। এ ছাড়া কাজটি মূল ঠিকাদার বিক্রি করে দিয়েছে অন্য ঠিকাদারের কাছে। এসব কারণে কাজ শুরু করতে দেরি হয়েছে। তবে ফেব্রুয়ারি-মার্চের মধ্যে মূল কাঠামো নির্মাণ হয়ে যাবে।

ট্যাগস :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

পিরোজপুরে বাস অটো মুখোমুখি সংঘর্ষে আহতদের হাসপাতালে খোঁজ খবর নেন জামাতে ইসলামির নেতৃবৃন্দ।

লোহাগড়ায় খোলা আকাশের নিচে বাতাসি স. প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষার্থীদের পাঠদান

আপডেট সময় : ১১:০৪:৩৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২০

নিউজ ডেস্ক: নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার শালনগর ইউনিয়নের ১৯৫০ সালে স্থানীয় সাত গ্রামের মানুষের চেষ্টায় ভদ্রডাঙ্গা বাতাসি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করা হয়। প্রায় ৭০ বছর আগের বিদ্যালয়টি গত বছর মে মাসে নূতন ভবন নির্মাণের জন্য পুরাতন ঘরটি ভেঙে ফেলা হয়। তখন থেকে খোলা আকাশের নিচে শিক্ষার্থীদের পাঠদান চলছে।
আপাতত ক্লাস নেয়ার জন্য ন্যূনতম একটি ঘর তৈরির কার্যাদেশ থাকলেও ঠিকাদার তা করে দেননি। ৯ মাসে নতুন ভবন তৈরির কাজটি শেষ করার কথা থাকলেও মেয়াদ শেষ হয়েছে ৩ জানুয়ারি। এখন কেবলমাত্র ভিত ঢালাই হয়েছে।
ঠিকাদারের অনিয়ম, দুর্নীতি ও গাফিলতির জন্য যথাসময়ে বিদ্যালয়ের নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি বলে অভিযোগ স্থানীয় এলাকাবাসি ও শিক্ষক-শিক্ষার্থীর। এতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বিপাকে পড়েছেন এবং সার্বিকভাবে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
বিদ্যালয় সূত্র জানায়, এলজিইডির চাহিদা ভিত্তিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় নতুন এ ভবনটি নির্মাণ করা হচ্ছে। চারতলা ভিত্তির এ ভবনটি বর্তমানে হবে পাঁচ কক্ষের একতলা ভবন। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৩ লাখ ৬৮ হাজার ৭৭৬ টাকা। কার্যাদেশ দেয়া হয় গত বছর ৪ এপ্রিল। এ প্রকল্পের কাজ শেষ করার মেয়াদ ছিল ৩ জানুয়ারি।
নড়াইলের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এস এম আলমগীর কবির এ প্রকল্পের ঠিকাদার। তবে নতুন ভবন নির্মানে কেন দেরি হচ্ছে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা কোন সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেননি তিনি।
সংশ্লিষ্ট দপ্তর সূত্র জানায়, শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেয়ার জন্য একটি টিনশেড ঘর তৈরি করতে ওই প্রকল্পের বরাদ্দের মধ্যে ১ লাখ ১৬ হাজার টাকা ধরা আছে। ঠিকাদার সেটি করেননি। বরাদ্দের টাকা দিয়ে ওই ঘরটি তৈরি করে দিলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ অনেকাংশ কমে যেতো। পুরাতন টিনশেড ঘরের জরাজীর্ণ টিন খুলে তা দিয়ে ছাপড়া দেয়া হয়েছে।
মুল ঠিকাদার কাজটি লোহাগড়া উপজেলার লাহুড়িয়ার ঠিকাদার কামরুজ্জামানের কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন। ওই ঠিকাদারের যথা সময়ে অনেক প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন না করার অতীত বদনাম রয়েছে। তাই এ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও ভবন নির্মাণ কাজের কোনো অগ্রগতি হয়নি। গত ছয় মাস যাবৎ এ কাজ একদমই বন্ধ ছিল। গত নভেম্বর মাসে প্রকল্পের কাজ শুরু হলেও তার তেমন কোনো অগ্রগতি নেই।
এ প্রসঙ্গে বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আছরা খাতুন জানান, শিশু শ্রেণির জন্য আলাদা শ্রেণিকক্ষ রাখার নির্দেশনা আছে। তবে সেটি হচ্ছে না। খোলা আকাশের নিচে শিক্ষার্থীদের পাঠদান ও পরীক্ষায় মনোযোগ নষ্ট হচ্ছে। এ অবস্থায় শিক্ষার প্রতি কোমলমতি শিশুদের নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী রাব্বি, রাখি তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী নূপুর, দিদারসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়, মাঝে মধ্যে সামান্য বাতাসে ধুলা-বালিতে চোখ-মুখ ভরে যায়। এছাড়াও বই-খাতা উড়ে যায়। মাটিতে নিচু হয়ে লেখা যায় না। তাই স্কুলে আসতে মন চায় না।
ঠিকাদারের নিয়োজিত ব্যবস্থাপক পলাশ মোল্লা জানান, গত বছর মে মাসে বিদ্যালয় ভবনটির ভিত ঢালাই দেয়ার জন্য মাটি খোঁড়া হয়। বর্ষায় কাঁচা রাস্তা দিয়ে মালামালও আনা সম্ভব হয়নি। তাই কাজ শুরু করা যায়নি।
উপজেলা প্রকৌশলী অভিজিৎ মজুমদার জানান, গত বর্ষায় মৌসুমে কাজ করা যায়নি। এ ছাড়া কাজটি মূল ঠিকাদার বিক্রি করে দিয়েছে অন্য ঠিকাদারের কাছে। এসব কারণে কাজ শুরু করতে দেরি হয়েছে। তবে ফেব্রুয়ারি-মার্চের মধ্যে মূল কাঠামো নির্মাণ হয়ে যাবে।