ঢাকা ০৬:৩০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ০৩ জানুয়ারী ২০২৫, ২০ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জানাজার নামাজে ইমামতি করলেন নুসরাতের বাবা

  • বার্তা কক্ষ
  • আপডেট সময় : ০৩:৩১:৫৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১২ এপ্রিল ২০১৯
  • ৩৫৬ বার পড়া হয়েছে

মাদ্রাসা শিক্ষার্থী নুসরাত এর জানাজা

অগ্নিদগ্ধ মাদ্রাসা শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যা ছয়টার কিছু পরে দাদির কবরের পাশে তাকে দাফন করা হয়।

এর আগে পৌনে ছয়টার দিকে সোনাগাজী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে নুসরাতের নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। দুর্বৃত্তের দেয়া আগুনে দগ্ধ হওয়া চরম নির্মমতার শিকার এই তরুনীর জানাজার নামাজ পড়িয়েছেন তার বাবা এ.কে.এম মুসা মানিক। জানাজা শেষে নিজ মেয়ের লাশের সামনে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।

এদিকে নিহত নুসরাতের জানাজায় অংশ নিতে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসেন হাজারো মানুষ। এছাড়াও আরো অংশ নেন ফেনী জেলার এসপিসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।

টানা পাঁচদিন প্রায় ১০৮ ঘণ্টা মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে বুধবার রাতে মৃত্যুর কাছে হার মানেন নুসরাত জাহান রাফি। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন নুসরাতকে বুধবার রাত সাড়ে ৯টায় মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।

শারীরিক অবস্থার একটু উন্নতি হলেই নুসরাতকে সিঙ্গাপুরে নেয়ার পরিকল্পনা করছিলেন চিকিৎসকরা। তার পরীক্ষা-নিরীক্ষাসহ চিকিৎসা সংক্রান্ত কাগজপত্রও সিঙ্গাপুরে চিকিৎসকদের কাছে পাঠানো হয়েছিল বুধবারই। তবে সব চেষ্টাই ব্যর্থ হয়ে যায় চিকিৎসকদের। ফেরানো যায়নি তাকে। গত ৬ এপ্রিল সকাল ৯টার দিকে আলিম পর্যায়ের আরবি প্রথম পত্র পরীক্ষা দিতে সোনাগাজীর ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে যান নুসরাত। এরপর কৌশলে তাকে পাশের ভবনের ছাদে ডেকে নেওয়া হয়। সেখানে ৪/৫ জন বোরকা পরা মানুষ ওই ছাত্রীর শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে তার শরীরের ৮০ শতাংশ পুড়ে যায়। পরে ওই ছাত্রীকে উদ্ধার করে তার স্বজনরা প্রথমে সোনাগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে ফেনী সদর হাসপাতালে পাঠান। সেখান থেকে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে পাঠানো হয়।

পরদিন তার চিকিৎসায় ৯ সদস্যের বোর্ড গঠন করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরীক্ষা কেন্দ্রে ছাত্রীর ওপর এমন নির্মমতায় উদ্বেগ প্রকাশ করে সার্বিক চিকিৎসার দায়িত্ব নেওয়ার কথা বলেন। পাশাপাশি জড়িতদের গ্রেফতারেরও নির্দেশ দেন।

ঢামেক বার্ন ইউনিটের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন রাফিকে মঙ্গলবার লাইফ সাপোর্টে রেখেই অস্ত্রোপচার করা হয়। সকাল সোয়া ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত চলে এই অস্ত্রোপচার। পরে চিকিৎসকরা জানান, রাফির ফুসফুসকে কার্যকর করতে সিঙ্গাপুরের চিকিৎসকদের পরামর্শে এই অস্ত্রোপচার করা হয়।

সোমবার নুসরাত জাহান রাফি ‘ডাইং ডিক্লারেশন’ (মৃত্যুশয্যায় দেওয়া বক্তব্য) দেন। নুসরাত তার বক্তব্যে বলেছেন, ওড়না দিয়ে হাত বেঁধে তার শরীরে আগুন দেওয়া হয়। আগুনে ওড়না পুড়ে গেলে তার হাত মুক্ত হয়। বোরকা, নেকাব ও হাতমোজা পরা যে চার নারী তার শরীরে আগুন ধরিয়ে দেন, তাদের একজনের নাম সম্পা বলে জানান নুসরাত।

ওই ছাত্রীর স্বজনরা বলেন, গত ২৭ মার্চ তার মাদ্রাসার অধ্যক্ষ এস এম সিরাজ উদদৌলা নুসরাতকে নিজের কক্ষে ডেকে নিয়ে শ্লীলতাহানি করেন। ওই ঘটনায় থানায় মামলা করেন তার মা। ওই মামলায় অধ্যক্ষ কারাগারে রয়েছেন। মামলা তুলে নিতে অধ্যক্ষের লোকজন হুমকি দিয়ে আসছিল বারবার। তারা জানান, আলিম পরীক্ষা চললেও আতঙ্কে স্বজনরা পরীক্ষা কেন্দ্রের কক্ষ পর্যন্ত পৌঁছে দিতেন। মামলা তুলে না নেওয়াতেই ক্ষিপ্ত হয়ে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয় নুসরাতকে।

ট্যাগস :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

পুলিশের উপর মহলে বড় ধরনের রদবদল

জানাজার নামাজে ইমামতি করলেন নুসরাতের বাবা

আপডেট সময় : ০৩:৩১:৫৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১২ এপ্রিল ২০১৯

অগ্নিদগ্ধ মাদ্রাসা শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যা ছয়টার কিছু পরে দাদির কবরের পাশে তাকে দাফন করা হয়।

এর আগে পৌনে ছয়টার দিকে সোনাগাজী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে নুসরাতের নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। দুর্বৃত্তের দেয়া আগুনে দগ্ধ হওয়া চরম নির্মমতার শিকার এই তরুনীর জানাজার নামাজ পড়িয়েছেন তার বাবা এ.কে.এম মুসা মানিক। জানাজা শেষে নিজ মেয়ের লাশের সামনে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।

এদিকে নিহত নুসরাতের জানাজায় অংশ নিতে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসেন হাজারো মানুষ। এছাড়াও আরো অংশ নেন ফেনী জেলার এসপিসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।

টানা পাঁচদিন প্রায় ১০৮ ঘণ্টা মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে বুধবার রাতে মৃত্যুর কাছে হার মানেন নুসরাত জাহান রাফি। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন নুসরাতকে বুধবার রাত সাড়ে ৯টায় মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।

শারীরিক অবস্থার একটু উন্নতি হলেই নুসরাতকে সিঙ্গাপুরে নেয়ার পরিকল্পনা করছিলেন চিকিৎসকরা। তার পরীক্ষা-নিরীক্ষাসহ চিকিৎসা সংক্রান্ত কাগজপত্রও সিঙ্গাপুরে চিকিৎসকদের কাছে পাঠানো হয়েছিল বুধবারই। তবে সব চেষ্টাই ব্যর্থ হয়ে যায় চিকিৎসকদের। ফেরানো যায়নি তাকে। গত ৬ এপ্রিল সকাল ৯টার দিকে আলিম পর্যায়ের আরবি প্রথম পত্র পরীক্ষা দিতে সোনাগাজীর ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে যান নুসরাত। এরপর কৌশলে তাকে পাশের ভবনের ছাদে ডেকে নেওয়া হয়। সেখানে ৪/৫ জন বোরকা পরা মানুষ ওই ছাত্রীর শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে তার শরীরের ৮০ শতাংশ পুড়ে যায়। পরে ওই ছাত্রীকে উদ্ধার করে তার স্বজনরা প্রথমে সোনাগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে ফেনী সদর হাসপাতালে পাঠান। সেখান থেকে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে পাঠানো হয়।

পরদিন তার চিকিৎসায় ৯ সদস্যের বোর্ড গঠন করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরীক্ষা কেন্দ্রে ছাত্রীর ওপর এমন নির্মমতায় উদ্বেগ প্রকাশ করে সার্বিক চিকিৎসার দায়িত্ব নেওয়ার কথা বলেন। পাশাপাশি জড়িতদের গ্রেফতারেরও নির্দেশ দেন।

ঢামেক বার্ন ইউনিটের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন রাফিকে মঙ্গলবার লাইফ সাপোর্টে রেখেই অস্ত্রোপচার করা হয়। সকাল সোয়া ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত চলে এই অস্ত্রোপচার। পরে চিকিৎসকরা জানান, রাফির ফুসফুসকে কার্যকর করতে সিঙ্গাপুরের চিকিৎসকদের পরামর্শে এই অস্ত্রোপচার করা হয়।

সোমবার নুসরাত জাহান রাফি ‘ডাইং ডিক্লারেশন’ (মৃত্যুশয্যায় দেওয়া বক্তব্য) দেন। নুসরাত তার বক্তব্যে বলেছেন, ওড়না দিয়ে হাত বেঁধে তার শরীরে আগুন দেওয়া হয়। আগুনে ওড়না পুড়ে গেলে তার হাত মুক্ত হয়। বোরকা, নেকাব ও হাতমোজা পরা যে চার নারী তার শরীরে আগুন ধরিয়ে দেন, তাদের একজনের নাম সম্পা বলে জানান নুসরাত।

ওই ছাত্রীর স্বজনরা বলেন, গত ২৭ মার্চ তার মাদ্রাসার অধ্যক্ষ এস এম সিরাজ উদদৌলা নুসরাতকে নিজের কক্ষে ডেকে নিয়ে শ্লীলতাহানি করেন। ওই ঘটনায় থানায় মামলা করেন তার মা। ওই মামলায় অধ্যক্ষ কারাগারে রয়েছেন। মামলা তুলে নিতে অধ্যক্ষের লোকজন হুমকি দিয়ে আসছিল বারবার। তারা জানান, আলিম পরীক্ষা চললেও আতঙ্কে স্বজনরা পরীক্ষা কেন্দ্রের কক্ষ পর্যন্ত পৌঁছে দিতেন। মামলা তুলে না নেওয়াতেই ক্ষিপ্ত হয়ে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয় নুসরাতকে।