ঢাকা ০৪:১৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৪ মে ২০২৫, ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ফসলী জমির মাটি যাচ্ছে ইটভাটায়

  • বার্তা কক্ষ
  • আপডেট সময় : ১২:৪৭:৩৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারী ২০২০
  • ৩১৯ বার পড়া হয়েছে

নিউজ ডেস্ক: বরগুনার আমতলী- তালতলীতে ফসলি জমির মাটির কেটে নেওয়া হচ্ছে ইটভাটায়। এক শ্রেণির দালালদের মাধ্যমে এসব মাটি কিনে ইট তৈরির কাজে লাগাচ্ছেন ভাটা মালিকরা। উৎপাদিত ফসলের দাম না পাওয়া ও নগদ টাকার আশায় জমির মালিকরা মাটি বিক্রি করে দিচ্ছেন। ফলে উর্বরতা হারিয়ে কৃষি জমি চাষাবাদের অযোগ্য হয়ে পড়ছে। এতে জমিতে ফসলহানির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
যথাযথ আইনের প্রয়োগ না থাকায় মাটি ব্যবসায়ীরা এক শ্রেণির দালাল দিয়ে সাধারণ কৃষকদের লোভে ফেলে ফসলী জমির মাটি কেটে নিচ্ছেন। ফলে কৃষি উৎপাদন মারাত্মক হুমকিতে পড়তে যাচ্ছে।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, আমতলী ও তালতলী উপজেলায় মোট ৩১টি ইটভাটা থাকলেও এর মধ্যে লাইসেন্স রয়েছে ১০/১২টি ইটভাটার। ইটভাটা স্থাপন ও ইট প্রস্তুত আইন না মেনে তিন ফসলী জমির ভেতর অধিকাংশ ইটভাটাগুলো স্থাপন করা হয়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, আমতলী ও তালতলীতে আবাদি জমির পরিমাণ প্রায় ৩৯ হাজার ৯০০ হেক্টর। প্রতিটি ইটভাটা স্থাপনে ৪ থেকে থেকে ৬/৭ একর জমির প্রয়োজন হয়। সে অনুযায়ী ৩১টির মতো ইটভাটা স্থাপনেই চলে গেছে কমপক্ষে ২১৭ হেক্টর আবাদি জমি। আর এসব ইটভাটায় ইট তৈরির জন্য প্রতিবছর শত শত একর ফসলি জমির মাটি কাটা হচ্ছে। ইটভাটায় ফসলি জমির মাটি কেঁটে নেওয়ার কারণে ফসলের প্রধান খাদ্য বিভিন্ন জৈব উপাদানের ব্যাপক ঘাটতি দেখা দিচ্ছে।
বরগুনা কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক এসএম বদরুল আলম বলেন, ফলনযোগ্য জমির উৎপাদন শক্তি জমা থাকে মাটির ৬ থেকে ১৮ ইঞ্চি গভীরতায়। মাটির এই অংশে যে কোনো ফসল বেড়ে উঠার গুণাগুণ সুরক্ষিত থাকে। বীজ রোপণের পর এই অংশ থেকেই ফসল প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদান গ্রহণ করে বড় হয়। এটাকে টপ সয়েল বলে। এই টপ সয়েলসহ জমির মাটি একবার কেঁটে নিলে সে জমির আর মৃত্তিকা প্রাণ থাকে না। ফলে ৫ থেকে ১০ বছরের মধ্যে ওই জমিতে কোনো ফসল উৎপাদিত হয় না। এতে জমিটি পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে।
উপজেলার বিভিন্ন ইটভাটা সংলগ্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ইটভাটা এলাকা ও এর আশপাশের বেশির ভাগ ফসলি জমির মাটি ৫ থেকে ১০ ফুট পর্যন্ত গভীর করে কাটা হচ্ছে। এতে ঐসব এলাকার ফসলি জমি ডোবায় পরিণত হচ্ছে।
ইটভাটায় মাটি বিক্রি করেছেন এমন কয়েকজন কৃষক ঘটখালীর মহাসিন হাওলাদার, কাউনিয়ার খলিল, কুকুয়ার আবুল হোসেন, খলিয়ানের নুরুল ইসলাম, কলাগাছিয়ার মনিরুল ইসলাম, বান্দ্রার শাহআলম, বেতীপাড়ার আইয়ূব আলী, পাঁচশোবিঘার আনোয়ার হোসেন জানান, ইটভাটায় মাটি সরবরাহের জন্য এক শ্রেণির দালাল গ্রামে গ্রামে ঘুরে কৃষকদের মাটি বিক্রি করতে উৎসাহ জোগায়। উৎপাদিত ফসলের সঠিক মূল্য না পাওয়ায় অযুহাত দেখিয়ে সহজ-সরল কৃষকদের ম্যানেজ করে দালালরা ফসলি জমির মাটি স্বল্পমূল্যে কিনে ইটভাটায় বিক্রি করে দিচ্ছেন। এতে যে জমির দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি হচ্ছে তা অনেক কৃষকই জানেন না।
আবার অনেক কৃষক তাদের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য মূল্য না পাওয়ার ক্ষতি পোষাতে তাদের ফসলী জমি থেকে এক হাজার মাটি ৫’শ থেকে ৭’শ টাকা দরে ইটভাটায় বিক্রি করে দিচ্ছেন।
চাওড়া ইউনিয়নের ঘটখালী গ্রামের কৃষক মোঃ মহসিন হাওলাদার বলেন, প্রতিবছরই আবাদ করে ফসল ফলিয়ে লোকসান গুনতে হয়। বাজারে ধানের দাম থাকেনা। তাই ইটভাটায় ফসলী জমির মাটি বিক্রি করে ক্ষতি পোষানোর চেষ্টা করছি।
তালতলীর বেতীপাড়া গ্রামের কৃষক আইয়ূব আলী জানান, এ এলাকার অনেক কৃষক তাদের ফসলী জমির মাটি ইটভাটায় বিক্রি করেছেন। এক হাজার মাটি ৫’শ থেকে ৭’শ টাকা দরে বিক্রি করেছেন।
তালতলী এবিএম ব্রিকসের ম্যানেজার মোঃ বজলুর রহমান মুঠোফোনে বলেন, যেসব কৃষক তাদের জমির মাটি বিক্রি করতে চায় আমরা তাদের সাথে যোগাযোগ করে মাটির দর দাম ঠিক করে সে মাটি কিনে আনি। প্রতি হাজার মাটি আমরা ৫’শ থেকে ৭’শ টাকা দরে ক্রয় করেছি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সিএম. রেজাউল করিম বলেন, জমির মাটি বিক্রি করলে জমির উৎপাদনশক্তি নষ্ট হয়ে যায়। কৃষকদের তাদের ফসলী জমির মাটি বিক্রি না করতে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

ট্যাগস :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

আপলোডকারীর তথ্য

রক্ত ঝরিয়ে পতিত ফ্যাসিস্ট আসিফদের থামাতে পারে নাই: হাসনাত

ফসলী জমির মাটি যাচ্ছে ইটভাটায়

আপডেট সময় : ১২:৪৭:৩৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারী ২০২০

নিউজ ডেস্ক: বরগুনার আমতলী- তালতলীতে ফসলি জমির মাটির কেটে নেওয়া হচ্ছে ইটভাটায়। এক শ্রেণির দালালদের মাধ্যমে এসব মাটি কিনে ইট তৈরির কাজে লাগাচ্ছেন ভাটা মালিকরা। উৎপাদিত ফসলের দাম না পাওয়া ও নগদ টাকার আশায় জমির মালিকরা মাটি বিক্রি করে দিচ্ছেন। ফলে উর্বরতা হারিয়ে কৃষি জমি চাষাবাদের অযোগ্য হয়ে পড়ছে। এতে জমিতে ফসলহানির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
যথাযথ আইনের প্রয়োগ না থাকায় মাটি ব্যবসায়ীরা এক শ্রেণির দালাল দিয়ে সাধারণ কৃষকদের লোভে ফেলে ফসলী জমির মাটি কেটে নিচ্ছেন। ফলে কৃষি উৎপাদন মারাত্মক হুমকিতে পড়তে যাচ্ছে।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, আমতলী ও তালতলী উপজেলায় মোট ৩১টি ইটভাটা থাকলেও এর মধ্যে লাইসেন্স রয়েছে ১০/১২টি ইটভাটার। ইটভাটা স্থাপন ও ইট প্রস্তুত আইন না মেনে তিন ফসলী জমির ভেতর অধিকাংশ ইটভাটাগুলো স্থাপন করা হয়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, আমতলী ও তালতলীতে আবাদি জমির পরিমাণ প্রায় ৩৯ হাজার ৯০০ হেক্টর। প্রতিটি ইটভাটা স্থাপনে ৪ থেকে থেকে ৬/৭ একর জমির প্রয়োজন হয়। সে অনুযায়ী ৩১টির মতো ইটভাটা স্থাপনেই চলে গেছে কমপক্ষে ২১৭ হেক্টর আবাদি জমি। আর এসব ইটভাটায় ইট তৈরির জন্য প্রতিবছর শত শত একর ফসলি জমির মাটি কাটা হচ্ছে। ইটভাটায় ফসলি জমির মাটি কেঁটে নেওয়ার কারণে ফসলের প্রধান খাদ্য বিভিন্ন জৈব উপাদানের ব্যাপক ঘাটতি দেখা দিচ্ছে।
বরগুনা কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক এসএম বদরুল আলম বলেন, ফলনযোগ্য জমির উৎপাদন শক্তি জমা থাকে মাটির ৬ থেকে ১৮ ইঞ্চি গভীরতায়। মাটির এই অংশে যে কোনো ফসল বেড়ে উঠার গুণাগুণ সুরক্ষিত থাকে। বীজ রোপণের পর এই অংশ থেকেই ফসল প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদান গ্রহণ করে বড় হয়। এটাকে টপ সয়েল বলে। এই টপ সয়েলসহ জমির মাটি একবার কেঁটে নিলে সে জমির আর মৃত্তিকা প্রাণ থাকে না। ফলে ৫ থেকে ১০ বছরের মধ্যে ওই জমিতে কোনো ফসল উৎপাদিত হয় না। এতে জমিটি পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে।
উপজেলার বিভিন্ন ইটভাটা সংলগ্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ইটভাটা এলাকা ও এর আশপাশের বেশির ভাগ ফসলি জমির মাটি ৫ থেকে ১০ ফুট পর্যন্ত গভীর করে কাটা হচ্ছে। এতে ঐসব এলাকার ফসলি জমি ডোবায় পরিণত হচ্ছে।
ইটভাটায় মাটি বিক্রি করেছেন এমন কয়েকজন কৃষক ঘটখালীর মহাসিন হাওলাদার, কাউনিয়ার খলিল, কুকুয়ার আবুল হোসেন, খলিয়ানের নুরুল ইসলাম, কলাগাছিয়ার মনিরুল ইসলাম, বান্দ্রার শাহআলম, বেতীপাড়ার আইয়ূব আলী, পাঁচশোবিঘার আনোয়ার হোসেন জানান, ইটভাটায় মাটি সরবরাহের জন্য এক শ্রেণির দালাল গ্রামে গ্রামে ঘুরে কৃষকদের মাটি বিক্রি করতে উৎসাহ জোগায়। উৎপাদিত ফসলের সঠিক মূল্য না পাওয়ায় অযুহাত দেখিয়ে সহজ-সরল কৃষকদের ম্যানেজ করে দালালরা ফসলি জমির মাটি স্বল্পমূল্যে কিনে ইটভাটায় বিক্রি করে দিচ্ছেন। এতে যে জমির দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি হচ্ছে তা অনেক কৃষকই জানেন না।
আবার অনেক কৃষক তাদের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য মূল্য না পাওয়ার ক্ষতি পোষাতে তাদের ফসলী জমি থেকে এক হাজার মাটি ৫’শ থেকে ৭’শ টাকা দরে ইটভাটায় বিক্রি করে দিচ্ছেন।
চাওড়া ইউনিয়নের ঘটখালী গ্রামের কৃষক মোঃ মহসিন হাওলাদার বলেন, প্রতিবছরই আবাদ করে ফসল ফলিয়ে লোকসান গুনতে হয়। বাজারে ধানের দাম থাকেনা। তাই ইটভাটায় ফসলী জমির মাটি বিক্রি করে ক্ষতি পোষানোর চেষ্টা করছি।
তালতলীর বেতীপাড়া গ্রামের কৃষক আইয়ূব আলী জানান, এ এলাকার অনেক কৃষক তাদের ফসলী জমির মাটি ইটভাটায় বিক্রি করেছেন। এক হাজার মাটি ৫’শ থেকে ৭’শ টাকা দরে বিক্রি করেছেন।
তালতলী এবিএম ব্রিকসের ম্যানেজার মোঃ বজলুর রহমান মুঠোফোনে বলেন, যেসব কৃষক তাদের জমির মাটি বিক্রি করতে চায় আমরা তাদের সাথে যোগাযোগ করে মাটির দর দাম ঠিক করে সে মাটি কিনে আনি। প্রতি হাজার মাটি আমরা ৫’শ থেকে ৭’শ টাকা দরে ক্রয় করেছি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সিএম. রেজাউল করিম বলেন, জমির মাটি বিক্রি করলে জমির উৎপাদনশক্তি নষ্ট হয়ে যায়। কৃষকদের তাদের ফসলী জমির মাটি বিক্রি না করতে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।