ঢাকা ০৯:২৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আজ ভয়াল ২৫ মার্চ

  • বার্তা কক্ষ
  • আপডেট সময় : ০৭:২২:৩৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৫ মার্চ ২০২০
  • ২৪০ বার পড়া হয়েছে

বিশেষ প্রতিবেদন: আজ ভয়াল ২৫ মার্চ, জাতীয় গণহত্যা দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে মধ্যরাতে বর্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী অত্যাধুনিক সমরাস্ত্রে সজ্জিত হয়ে কাপুরুষের মতো ঝাঁপিয়ে পড়েছিল ঘুমন্ত বাঙালিদের ওপর। স্বাধিকারের দাবিতে আন্দোলনরত বাঙালিদের কণ্ঠ চিরতরে স্তব্ধ করে দিতে ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামের এ অভিযানে এই রাতে হত্যা করা হয় অসংখ্য নিরপরাধ মানুষকে। গণহত্যা চালিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজারবাগ পুলিশলাইনসহ গোটা ঢাকা পরিণত করা হয় মৃত্যুপুরীতে।

২০১৭ সাল থেকে দিনটি ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালিত হচ্ছে। দিবসটির আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ের কাজও চলছে। এবার করোনা ভাইরাসের কারণে দিবসটির তেমন কোনো কর্মসূচি থাকছে না। দিনটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণী দিয়েছেন।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ সকালে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান ও পাকিস্তান পিপলস পার্টির প্রধান জুলফিকার আলী ভুট্টো ঢাকায় এক গোপন বৈঠকে মিলিত হন। ভুট্টো বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শুধু বলেন, ‘পরিস্থিতি সংকটজনক।’ বৈঠকের পরই ঢাকায় সেনাবাহিনী নামার গুজব ছড়িয়ে পড়ে। সকাল থেকে সারাদিন হাজার হাজার মানুষ বঙ্গবন্ধুর বাসভবনের সামনে সমবেত হন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বেশ কয়েকবার বাসার ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে জনতার উদ্দেশে বলেন, আমরা সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানে সর্বাত্মক চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান সামরিক ব্যবস্থার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানে বেশি আগ্রহী। এ অবস্থায় আমাদের পথ আমাদেরই দেখতে হবে। সবাইকে সর্বোচ্চ ত্যাগের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।

সেদিন ভুট্টোর সঙ্গে বৈঠক করেই জেনারেল ইয়াহিয়া গোপনে বৈঠক করেন ইস্টার্ন জোনের সামরিক প্রধান লে. জেনারেল টিক্কা খান, চিফ অব জেনারেল স্টাফ জেনারেল আবদুল হামিদ খান, মেজর জেনারেল মিঠঠা খান, মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলীসহ উচ্চপদস্থ সেনা অফিসারদের সঙ্গে। ‘অপারেশন সার্চলাইট’ বাস্তবায়নের অনুমোদন হয় বৈঠকে। রাত পৌনে ৮টায় গোপনে ঢাকা ত্যাগ করেন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া। ভুট্টোও রাতে গোপনে ঢাকা ত্যাগ করেন।

এর পর রাত ঘনালে আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ঝাঁপিয়ে পড়ে ঘুমন্ত সাধারণ মানুষের ওপর। ট্যাংক, কামান ও মেশিনগানের গোলায় প্রাণ হারায় হাজার হাজার মানুষ। যেখানে যাকে পায় তাকেই হত্যা করা হয়।

এ হত্যাযজ্ঞ চলে পিলখানার ইপিআর সদর দপ্তর, রাজারবাগ পুলিশ লাইনস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল ও ইকবাল হলে, নগরীর বিভিন্ন এলাকায়। জ্বালিয়ে দেওয়া হয় বাড়িঘর। একই সময়ে হত্যাযজ্ঞ চালানো হয় অন্যান্য বড় শহরেও। গ্রেপ্তার করা হয় বঙ্গবন্ধুকে। এর আগে তিনি ওয়্যারলেস বার্তায় স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে সবাইকে শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে লড়ার আহ্বান জানান।

হানাদারদের এ তা-বের বিপরীতে বাঙালি দেখায় প্রতিরোধের অন্য রূপ। পুলিশ ও ইপিআর সদস্যরা সেই রাতেই বীরত্বের সঙ্গে কঠিন প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। এক পর্যায়ে দেশের সর্বত্র শুরু হয় স্বাধীনতা যুদ্ধ। ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত হয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ।

ট্যাগস :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

চিন্ময় কৃষ্ণের সমর্থকদের হামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী নিহত

আজ ভয়াল ২৫ মার্চ

আপডেট সময় : ০৭:২২:৩৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৫ মার্চ ২০২০

বিশেষ প্রতিবেদন: আজ ভয়াল ২৫ মার্চ, জাতীয় গণহত্যা দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে মধ্যরাতে বর্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী অত্যাধুনিক সমরাস্ত্রে সজ্জিত হয়ে কাপুরুষের মতো ঝাঁপিয়ে পড়েছিল ঘুমন্ত বাঙালিদের ওপর। স্বাধিকারের দাবিতে আন্দোলনরত বাঙালিদের কণ্ঠ চিরতরে স্তব্ধ করে দিতে ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামের এ অভিযানে এই রাতে হত্যা করা হয় অসংখ্য নিরপরাধ মানুষকে। গণহত্যা চালিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজারবাগ পুলিশলাইনসহ গোটা ঢাকা পরিণত করা হয় মৃত্যুপুরীতে।

২০১৭ সাল থেকে দিনটি ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালিত হচ্ছে। দিবসটির আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ের কাজও চলছে। এবার করোনা ভাইরাসের কারণে দিবসটির তেমন কোনো কর্মসূচি থাকছে না। দিনটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণী দিয়েছেন।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ সকালে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান ও পাকিস্তান পিপলস পার্টির প্রধান জুলফিকার আলী ভুট্টো ঢাকায় এক গোপন বৈঠকে মিলিত হন। ভুট্টো বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শুধু বলেন, ‘পরিস্থিতি সংকটজনক।’ বৈঠকের পরই ঢাকায় সেনাবাহিনী নামার গুজব ছড়িয়ে পড়ে। সকাল থেকে সারাদিন হাজার হাজার মানুষ বঙ্গবন্ধুর বাসভবনের সামনে সমবেত হন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বেশ কয়েকবার বাসার ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে জনতার উদ্দেশে বলেন, আমরা সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানে সর্বাত্মক চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান সামরিক ব্যবস্থার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানে বেশি আগ্রহী। এ অবস্থায় আমাদের পথ আমাদেরই দেখতে হবে। সবাইকে সর্বোচ্চ ত্যাগের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।

সেদিন ভুট্টোর সঙ্গে বৈঠক করেই জেনারেল ইয়াহিয়া গোপনে বৈঠক করেন ইস্টার্ন জোনের সামরিক প্রধান লে. জেনারেল টিক্কা খান, চিফ অব জেনারেল স্টাফ জেনারেল আবদুল হামিদ খান, মেজর জেনারেল মিঠঠা খান, মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলীসহ উচ্চপদস্থ সেনা অফিসারদের সঙ্গে। ‘অপারেশন সার্চলাইট’ বাস্তবায়নের অনুমোদন হয় বৈঠকে। রাত পৌনে ৮টায় গোপনে ঢাকা ত্যাগ করেন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া। ভুট্টোও রাতে গোপনে ঢাকা ত্যাগ করেন।

এর পর রাত ঘনালে আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ঝাঁপিয়ে পড়ে ঘুমন্ত সাধারণ মানুষের ওপর। ট্যাংক, কামান ও মেশিনগানের গোলায় প্রাণ হারায় হাজার হাজার মানুষ। যেখানে যাকে পায় তাকেই হত্যা করা হয়।

এ হত্যাযজ্ঞ চলে পিলখানার ইপিআর সদর দপ্তর, রাজারবাগ পুলিশ লাইনস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল ও ইকবাল হলে, নগরীর বিভিন্ন এলাকায়। জ্বালিয়ে দেওয়া হয় বাড়িঘর। একই সময়ে হত্যাযজ্ঞ চালানো হয় অন্যান্য বড় শহরেও। গ্রেপ্তার করা হয় বঙ্গবন্ধুকে। এর আগে তিনি ওয়্যারলেস বার্তায় স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে সবাইকে শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে লড়ার আহ্বান জানান।

হানাদারদের এ তা-বের বিপরীতে বাঙালি দেখায় প্রতিরোধের অন্য রূপ। পুলিশ ও ইপিআর সদস্যরা সেই রাতেই বীরত্বের সঙ্গে কঠিন প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। এক পর্যায়ে দেশের সর্বত্র শুরু হয় স্বাধীনতা যুদ্ধ। ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত হয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ।