প্রিন্স তালুকদার::
জেসমিন শামীমা নিঝুম, ইডেন মহিলা কলেজের সাবেক ছাত্রনেত্রী। গত শুক্রবার (০৩ এপ্রিল) তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন। স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরলাম- “গরীবের কুঠিরে এখন স্বদেশী সভ্য চোরের হানা। কোভিড-১৯ স্টিমরোলারে।পিষ্ট মানব সভ্যতা।অভাবের জাতাকলে বিপর্যস্ত নিম্নবিত্ত। লজ্জা ও সংকোচের কারাগারে বন্ধি মধ্যবিত্ত। মৃত্যুঞ্জয়ী অসাধু কারবারী।।আজ জীবন প্রদীপের ভয়ংকর নিদারুন ইতিকথার নাম —প্যান্ডেমিক করোনা।।
গ্রীক ইতিহাসবীদ থুসিডাইডসের রচনাংশ ‘হিস্ট্রি অব দ্য পেলোপনেসিয়ান ওয়্যার’ থেকে জানা যায় খ্রিষ্টপূর্ব ৪৩০ অব্দে স্পার্টানদের সাথে গ্রীকদের যুদ্ধ চলছে। যুদ্ধে খুব একটা সুবিধা করে উঠতে পারছিল না গ্রীকরা তার ওপর ‘মরার ওপর খাড়ার ঘা’ হয়ে আসে ‘দ্য প্লেগ অব এথেন্স’ নামে পরিচিত পৃথিবীর প্রথম প্লেগ মহামারী। এ মহামারীতে হাজার হাজার গ্রীক সৈন্য মারা যায় কয়েক দিনের ব্যবধানে।
এরপর আর একটি ট্রাজেডিক মহামারীর দুঃখজনক অধ্যায় থেকে জানা যায়— বাইজান্টাইন সাম্রাজ্যের অন্যতম শক্তিশালী এবং প্রভাবশালী সম্রাট জাস্টিনিয়ান রোমান সাম্রাজ্যের হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনার জন্য যেসব অভিযান চালিয়েছিলেন, সেগুলোর জন্য ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। কিন্তু সেসব অভিযান ছাপিয়ে তার নাম অধিকবার উচ্চারিত হয় তার শাসনামলে ঘটে যাওয়া এক ভয়াবহ মহামারীর কারণে। ৫৪০-৫৪১ খ্রিষ্টাব্দের দিকে মিশরে এক ভয়ানক প্লেগের উৎপত্তি ঘটে।
রোগের প্রথম আক্রমণটা ছিল বাইজান্টাইনের রাজধানী কনস্টান্টিনোপলে (বর্তমান ইস্তাম্বুল)। কোনো কোনো ইতিহাসবিদের মতে, মহামারীর চূড়ান্ত পর্যায়ে সেখানে প্রতিদিন গড়ে ৫ হাজার মানুষ মারা যেত!
প্রায় ৫০ বছর টিকে থাকা এ মহামারী আড়াই কোটি মানুষের প্রাণ কেড়ে নেয়। তবে কিছু কিছু উৎসে সংখ্যাটা ১০ কোটিতেও ঠেকেছে। প্রাচীন পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ানক এ মহামারীই ইউরোপে ‘ডার্ক এজ’র সূচনা করেছিল।
এভাবে শতাব্দীর পর শতাব্দী নতুন নতুন মহামারী বার বার চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে বিশ্বকে। আর মানবজাতি কে টিকেয়ে রাখার যুদ্ধে বার বার সফল হয়েছে ধরিত্রী।কিন্তু অজস্রবার কোটি কোটি বোন হারিয়েছে তার স্বামীকে। কোটি কোটি মা হারিয়েছে তার সন্তানকে।কোটি কোটি স্ত্রী হারিয়েছে তার স্বামীকে,স্বামী হারিয়েছে তার স্ত্রীকে। ভাই হারিয়েছে বোনকে,বোন হারিয়েছে ভাইকে।
কিন্তু আর কতদিন এভাবে চলবে??? এ প্রশ্ন সারা পৃথিবীর ৭৫০ কোটি মানুষের।।তবে দিবালোকের মতো প্রতিয়মান একটা চির সত্য কথা হলো প্রকৃতির খামখেয়ালী খেলার সাথে পেরে উঠার মতো শক্তি পৃথিবীর কোন পরাশক্তির নেই।প্রকৃতির খামখেয়ালী চরিত্রকে বোঝার শক্তি পৃথিবীর কোন বিজ্ঞান বা বিজ্ঞানীর নেই।প্রকৃতির নিজেস্ব যৌক্তিকতাকে চ্যালেঞ্জ করার শক্তি পৃথিবীর কোন পরাক্রমশালী প্রেসিডেন্টের নেই। তাই বলতে দ্বিধা নেই সারা পৃথিবীর মানুষের এখন সময় এসেছে এক আল্লাহতে বিশ্বাসী হওয়া,এক ঈশ্বরে বিশ্বাসী হওয়া,এক ভগবানে বিশ্বাসী হওয়া।এছাড়া আর কোন উপায় আছে কিনা আমার জানা নেই।
তবে এ মুহুর্তে একটি বিষয় জানার খুব ইচ্ছা প্রবল হয়ে উঠেছে বিশ্ববাসীর কাছে।তাদের মাঝে ক্ষুদ্র একজন ব্যাক্তি আমিও।এই ইচ্ছাটি উত্তর কোরিয়ার ক্ষ্যাপা পাগল শাসক কিম জং থেকে শুরু করে আমেরিকার মাথা মোটা ডোনাল্ড ট্রাম্প সবার মাঝেই এখন বিদ্যমান। প্রশ্ন?? উত্তর খুঁজতে গেলে প্রথমেই যে জিনিসটা ভাবতে হয়,সেটি হলো — কোন প্রানী থেকে ভাইরাসটি মানব শরীরে বাসা বাঁধলো?? আসলেই কি কোন প্রানী থেকে ভাইরাসটি ছড়িয়েছে?? নাকি শত্রু দেশকে ঘায়েল করার জন্য কোন দেশের ল্যাবরেটরিতে চাষ করা জীবানু অস্ত্র?? যা কিনা প্রকৃতির আক্রোশে বিজ্ঞানীদের নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে গেছে।
এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে আমাদের চলে যেতে হবে চীন দেশে। চীনের কর্তৃপক্ষ বলছে, চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরের একটি সামুদ্রিক খাবার ও পশুপাখির বাজারের সাথে এর প্রথম সংক্রমণগুলোর সম্পর্ক আছে।চীনে মানব শরীরে যে পরিমান সংক্রমণ ঘটেছে – তার ৮২ শতাংশই নিবন্ধিত হয়েছে এই হুবেই অঞ্চল থেকে। এ তথ্য জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটির।
কিন্তু চীনা গবেষকদের এক জরিপ যা ল্যান্সেট সাময়িকীতে প্রকাশিত হয় – তাতে বলা হয় কোভিড নাইনটিন ভাইরাসে সংক্রমণ চিহ্নিত হয় একজন লোকের দেহে ২০১৯ সালের পহেলা ডিসেম্বর। সেই ব্যক্তিটির সাথে উহান শহরের ওই বাজারের কোন সম্পর্ক ছিল না।
ওই জরিপের অন্যতম প্রণেতা এবং উহানের জিনইন্টান হাসপাতালের ডাক্তার উ ওয়েনজুয়ান বলেন, প্রথম রোগীটি ছিলেন একজন বয়স্ক পুরুষ যিনি আলঝেইমার্স ডিজিজ-এ আক্রান্ত ছিলেন। তিনি যেখানে থাকতেন সেখান থেকে ওই বাজারে যেতে চার-পাঁচবার বাস বদলাতে হয়। তা ছাড়া তিনি অসুস্থ থাকায় বাড়ি থেকেও বেরুতেন না।
এবার এ প্রশ্নের উত্তর খোঁজার জন্য চীনের উহান থেকে আর একবার ঘুরে আসি।করোনাভাইরাস উৎপত্তির কেন্দ্রস্থল চীনের উহান শহরের এক তরুণ চিকিৎসক লি ওয়েনলিয়াং গত ডিসেম্বরের শেষের দিকে সার্সের মতো কোনো একটি ভাইরাস সংক্রমণ এবং এর বিস্তার সম্পর্কে পূর্বাভাস দিয়েছিলেন। কিন্তু সরকারি কর্মকর্তারা সেই পূর্বাভাসকে গুজব বলে উড়িয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু এর কিছু দিনের মাথায় জানা যায় সেই তরুণ চিকিৎসক মারা গেছেন। এখন প্রশ্ন গুলোর উত্তরের দায়িত্ব আপনাদের উপর ছেড়ে দিলাম।
আনুমানিক ৪.৫৪ বিলিয়ন বছর আগে মঙ্গল গ্রহের সমান থিয়া নামের একটি গ্রহানুর সাথে পৃথিবীর সংঘর্ষের ফলে থিয়া ভেঙ্গে চাঁদের জন্ম হয়।পৃথিবীর ক্ষতি কম হয়।মহাকালের স্রোতে মিশে কালের পরিক্রমায় আজ অব্দি পৃথিবীতে যতগুলো মহামারী এসেছে তার ভিতরে কোভিড—১৯ অন্যতম মানব জীবন হত্যাকারী একটা ভাইরাস। একথা যেমন অস্বীকার করার উপায় নেই, সেই সাথে এটাও অস্বীকার করার উপায় নেই— মানব সভ্যতার এই সঙ্কটময় মুহুর্ত মানুষেরই কৃতকর্মের ফল।
এ মুহুর্তে আমরা যারা বাংলাদেশে আছি,, তাদের জন্য আরো কিছু কঠিন বাস্তবতাকে অস্বীকার করার কোন উপায় নেই।
১।কতিপয় অসাধু ব্যাবসায়ীদের দ্বারা দ্রব্য মূল্যের উর্ধগতি।
২।রাজনৈতিক অরাজনৈতিক কিছু ব্যাক্তির মাধ্যমে ত্রান সামগ্রী চুরি।
৩।করোনা আক্রান্ত মানুষের সঠিক সংখ্যা নির্নয়।
৪।কুসংস্কার ও অশিক্ষার সামাজিক কুফল।
৫।নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত কষ্টময় দিনযাপন।
এবার একটু অন্য প্রসংগে আসি।বাংলার সমাজে শত বছর ধরে ” হুজগে বাংগালী ” নামে একটা কথা প্রচলিত আছে।এদেশের একটা প্রচলিত নিয়ম,সামান্য কোন ঘটনার প্রেক্ষিতে দ্রব্য মুল্যের উর্ধগতি।এ ব্যাবস্থার জন্য ভোক্তা বিক্রেতা উভয়ে সমান ভাবে দায়ী। এক শ্রেনীর মানুষ যারা অবৈধ পথে রাতারাতি টাকার পাহাড় গড়েছে।তারা এক ঘন্টায় ১০ লাখ টাকা উড়াতে সামান্য দ্বিধাবোধ করেনা।আর এই সুযোগে বিক্রেতা হয়ে যান বাংলার জমিদার।আর খেসারত দিতে হচ্ছে নিম্ন বিত্ত ও মধ্যবিত্তদের।। নিম্নবিত্তদের হাত পেতে চেয়ে খেতে পারলেও আমাদের মতো মধ্যবিত্তদের দ্বারা তা সম্ভব হচ্ছেনা।
মধ্যবিত্তরা এমন একটা পথের পথিক যে পথে সম্মান হানির চেয়ে মৃত্যু অনেক শ্রেয়।আমি এমন অনেক মানুষকে দেখেছি যাদের বাইরে থেকে দেখে বোঝার উপায় নেই,তারা কতটা অভাবী।।অথচ অনেক সময় তারা ঘরে না খেয়ে থাকে।ক্ষুধা অপমান আর ব্যার্থতার গ্লানি ঢাকার জন্য তাদের একমাত্র সম্ভল নিরবে নিভৃতে অশ্রু বিসর্জন।বাংলায় এমন মানুষের সংখ্যা অগনিত।সমাজে অনেক মানুষ আছে দুদিন না খেয়ে থাকলেও তারা কারো কাছে হাত পাতে না।এমনকি সরকারি সাহায্য সহযোগিতা নিতেও অপমান বোধ করে।বর্তমান সময়ে এই মানুষগুলো সবচেয়ে বড় বিপদের মধ্যে আছে।
তবে এই বিপদের চেয়ে হালে আর একটা বিপদ জেঁকে বসেছে গরীব অসহায় নিরীহ বাংগালীর ঘাড়ের উপর।কিছু কিছু স্থানে রাজনৈতিক নেতাকর্মিদের দ্বারা ত্রান চুরীর ঘটনা ঘটেছে।অবশ্য এ ব্যাপারে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, শেখ হাসিনা কঠিন হুশিয়ারি উচ্চারন করেছেন।
যাদের ঘরে খাদ্যদ্রব্য শেষের পথে তারা 333 তে কল দিয়ে সরকারি সাহায্য চাইতে পারেন। সরকারি দ্রব্যে আমদের সবার অধিকার আছে।এটা কোন প্রকার করুনা নয়।আর একটি ব্যাপার, যা না বললে আমার লেখার যথার্থ পরিসমাপ্তি ঘটবে না।
আশাকরি প্রতি মুহুর্তে করোনা আক্রান্ত মানুষের সঠিক সংখ্যা আমরা জানতে পারবো এবং আমরা সচেতন হবো।যদি সরকারের কোন কর্মকর্তা বা কর্মচারীর অবহেলার কারনে সাধারন মানুষ প্রকৃত সংখ্যা জানতে না পারে বা অবহেলার কারনে যদি প্রকৃত সংখ্যা উদঘাটন না হয়,তাহলে সেটা হবে বাংগালী জাতির জন্য একটা বড় দূর্ভাগ্যের বিষয়।এখন পর্যন্ত আপডেট যে নিউজ আমরা পাচ্ছি সেটা যদি সত্য হয়। তাহলে বিশ্ববাসীকে নির্দ্বিধায় বলবো — বাংগালীকে তোমরা তাচ্ছিল্য করোনা, বাংগালী আজ কোভিড —১৯ কে পরাজিত করার জন্য বিশ্বের অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করার জন্য কাজ করতেছে।এ পরিস্থিতিতে বিশ্ব যখন বাংলাদেশে ২ কোটি মানুষের মৃত্যু আশংকা করছে।তখন বলতেই হয় বাংগালী আজ নিজেকে রক্ষা করতে শিখেছে।তাহলে বলতেই হয়, বাংগালী বিশ্ব পরিসংখ্যান কে বাতিল করে দিয়ে আর একটা ৭১ কে জয়ের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে।বাংলাদেশের করোনা পরিসংখ্যান যদি সত্য হয় তাহলে আর একটা কথা না বললে নিজের কাছে নিজেকে অপরাধী মনে হবে—
যে সমস্ত বড় মাথার প্রফেসর,সুশীল পন্ডিতরা করোনা নিয়ে উল্টা পাল্টা মন্তব্য করে বাংলার মানুষের উদ্দিগ্নটা বাড়ানোর চেষ্টা করেছেন,
তাদেরকে আর একটা কথা দাম্ভক্তির সাথে বলতেই হয়— বাংলার মাটিতে ১২ জন আউলিয়া ঘুমিয়ে আছেন।এই বাংলার মাটিতে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি পরিমান আল্লার ঘর অবস্থিত।এই বাংলার মাটিতে আল্লাহর ইসলামের পক্ষে,সারা বিশ্বে নির্যাতিত মুসলিম ভাই বোনদের পক্ষে রাজপথে প্রতিবাদী বিপ্লবী কন্ঠের অভাব নেই।তাই আমার বিশ্বাস বাংলার ১৬ কোটি জান-মাল আল্লাহ নিজেই রক্ষা করবেন।
একটা বিষয় না বললেই নয়। যখন দেখি বাংলাদেশের মাটিতে সাধারন ভাবে কেউ মৃত্যুবরন করলে তাকেও ঐ এলাকার কিছু মানুষ কবর দিতে দিচ্ছে না বা জানাজায় কেউ শরিক হচ্ছে না।দেখা যাচ্ছে কেউ স্ট্রোক করে বা নিউমোনিয়া বা অন্য কোন রোগে মারা যাচ্ছে।তার ক্ষেত্রেও এই ঘটনা ঘটছে।এই মুর্খতা, কু সংস্কার ছন্নতা বাংগালী জাতির সমস্ত গৌরবময় ইতিহাসকে রাতারাতি লুন্ঠন করে নিয়ে যাচ্ছে।এই সমস্ত ঘটনার জন্য বাংলার বুক থেকে বীর উপাধিটা ধীরে ধীরে বিলুপ্তির পথে হাটছে।
তাই বলবো, আসুন আমরা যারা সারা বাংলার প্রতিটি পাড়া মহল্লায় কিশোর যুবক তরুন ভাই বোন আছি সবাই এই কু সংস্কার অন্ধতা অনাহারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করি।আসুন আমরা সবাই সারা বাংলার মানুষকে করোনা বিষয়ে সচেতন করি।আসুন আমরা সবাই গরীব অসহায় ও দারিদ্র্য মানুষের মুখে অন্ন তুলে দেই।
আসুন আমরা করোনা, দারিদ্র্যতা, অসহায়ত্ব ও অনাহার কে জয় করে একক জাতি তত্ত্বের সম্প্রীতি অক্ষুন্ন রেখে বীরের জাতি হিসাবে বিশ্বের দরবারে আর একবার মাথা তুলে দাঁড়াই।