রোযার গুরুত্ব ও তাৎপর্যঃ
সাওম আরবি শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ বিরত থাকা।
শরীয়তের পরিভাষায় সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত নিয়ত সহকারে পানাহার ও যৌনাচার থেকে বিরত থাকাকে সাওম বা রোযা বলা হয়।
বস্তুতঃ রোযা রাখার নিয়ম সর্বযুগেই প্রচলিত ছিল। হযরত আদম( আঃ) থেকে শুরু করে হযরত মুহাম্মদ (সঃ) পর্যন্ত প্রত্যেক নবী রাসুল গনের যুগেই রোযা ছিল।তবে ইসলাম প্রাথমিক যুগে রোযা ছিল তিন দিন। পরে রমযানের রোযা ফরয হলে তা রহিত হয়ে যায়।
অর্থ্যাৎ ইসলাম ধর্মে রোযার প্রচলন ছিল তবে কোন কোন ধর্মে রোযার ব্যাপারে বেশ স্বাধীনতা ছিল
এ অবাধ স্বাধীনতা রোযার ভাবমুর্তি ও প্রাণ শক্তি সম্পূর্ণ রুপে নষ্ট করে দিয়েছিল। চারিত্রিক মহত্ব, নৈতিক পরিচ্ছন্নতা, চিন্তার বিশুদ্ধতা,আত্মিক পবিত্রতা এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভের অন্যতম এ মাধ্যম রোযা কালক্রমে অন্তঃসারশূণ্য নিছক একটা অনুষ্ঠানে পরিনত হয়েছিল।
এ অবস্থা হতে রোযাকে রহমত, বরকত, মাগফিরাতের দিকে ফিরিয়ে আনতে এবং একে আত্মিক নৈতিক ও চারিত্রিক ধারক বানানোর নিমিত্তে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন রোযাকে তার বান্দাদের উপর ফরয করে দিয়েছেন।
সূরা আল বাকারা (البقرة), আয়াত: ১৮৩
یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا کُتِبَ عَلَیۡکُمُ الصِّیَامُ کَمَا کُتِبَ عَلَی الَّذِیۡنَ مِنۡ قَبۡلِکُمۡ لَعَلَّکُمۡ تَتَّقُوۡنَ ﴿۱۸۳﴾ۙ
উচ্চারণঃ ইয়াআইয়ুহাল্লাযীনা আ-মানূ কুতিবা ‘আলাইকুমসসিয়া-মু কামা-কুতিবা ‘আলাল্লাযীনা মিন কাবলিকুম লা‘আল্লাকুম তাত্তাকূন।
অর্থঃ হে ঈমানদারগন, তোমাদের উপর রোযা ফরয করা হইয়াছে, যেমন ফরয করা হয়েছিল ঐ লোকদের উপর যারা তোমাদের পূর্বে বিগত হইয়াছে, যেন তোমরা মুত্তাকী হইতে পার।
সূরা আল বাকারা (البقرة), আয়াত: ১৮৫
شَہۡرُ رَمَضَانَ الَّذِیۡۤ اُنۡزِلَ فِیۡہِ الۡقُرۡاٰنُ ہُدًی لِّلنَّاسِ وَ بَیِّنٰتٍ مِّنَ الۡہُدٰی وَ الۡفُرۡقَانِ ۚ فَمَنۡ شَہِدَ مِنۡکُمُ الشَّہۡرَ فَلۡیَصُمۡہُ ؕ وَ مَنۡ کَانَ مَرِیۡضًا اَوۡ عَلٰی سَفَرٍ فَعِدَّۃٌ مِّنۡ اَیَّامٍ اُخَرَ ؕ یُرِیۡدُ اللّٰہُ بِکُمُ الۡیُسۡرَ وَ لَا یُرِیۡدُ بِکُمُ الۡعُسۡرَ ۫ وَ لِتُکۡمِلُوا الۡعِدَّۃَ وَ لِتُکَبِّرُوا اللّٰہَ عَلٰی مَا ہَدٰىکُمۡ وَ لَعَلَّکُمۡ تَشۡکُرُوۡنَ ﴿۱۸۵
অর্থঃ রমযান মাস,যাতে মানুষের পথপ্রদর্শক সত্যপথের উজ্জল নিদর্শন ও সত্য মিথ্যার-পার্থক্যকারী রুপে কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে। কাজেই তোমাদের মধ্যে যে কেউ এ মাসটির দেখা পাবে সে যেন এতে রোযা রাখে। আর যে অসুস্থ বা সফরে আছে সে যেন সেই সংখ্যক অন্য দিনগুলো অন্যসময় রোযা রেখে পূর্ণ করবে। আল্লাহ্ তোমাদের জন্য সুবিধা চান, আর তিনি তোমাদের জন্য কষ্টকর অবস্থা চান না, আর তোমরা যেন এই সংখ্যা সম্পূর্ণ করো, আর যাতে আল্লাহ্র মহিমা কীর্তন করো তোমাদের যে পথনির্দেশ তিনি দিয়েছেন সেইজন্য, আর তোমরা যেন কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করো।
রোযার ব্যাপারে ইসলামের প্রধানতম সংস্কার হলো, ধারণাগত পরিবর্তন।অথ্যার্ৎ ইয়াহুদীদের দৃষ্টিকোণ থেকে রোযা ছিল বেদনা ও শোকের প্রতীক। পক্ষান্তরে ইসলামের দৃষ্টিতে রোযা হল এমন এক সার্বজনীন ইবাদত যা রোযাদারকে দান করে সজীবতা, হৃদয়ের পবিত্রতা ও চিন্তাধারায় বিশুদ্ধতা। এ রোযার মাধ্যমে বান্দা লাভ করে এক রুহানি তৃপ্তি, নতুন উদ্যম ও প্রেরণা। রোযার উপরে আল্লাহ তাআলা যে পুরুস্কার ঘোষনা দিয়েছেন তা এক মুহুর্তে বান্দাকে করে তোলে ভোগে বিতৃষ্ণ,ত্যাগে উদ্বুদ্ধ এবং আত্মবিশ্বাসে বলিয়ান।
হাদীসে কুদসীতে আছে,-আল্লাহতায়ালা এরশাদ করেন-;রোযা আমার জন্য আর আমি স্বয়ং এর পুরুস্কার দিব।
অপর একটি হাদিসে রাসুলুল্লাহ(সঃ) বলেছেন,
রোযাদার ব্যক্তি দুটি আনন্দ লাভ করবে। একটি আনন্দ ইফতারির মুহুর্তে আর অপরটি তার রবের সাথে সাক্ষাতের মুহুর্তে।
সুতরাং; এ রোযা প্রত্যেক সক্ষম ব্যক্তির জন্য পালন অবশ্যই কর্তব্য।
রোযাদার ব্যক্তির যাতে কষ্ট কম হয় সে জন্য সেহরি খাওয়া সুন্নত এবং বিলম্বে সেহরি খাওয়াকে মুস্তাহাব করে দিয়েছেন। এমনি ভাবে ইফতারের সময় বিলম্ব না করে যথাসময় ইফতার করার নির্দেশ দিয়েছেন।
প্রাচীন ধর্ম সমূহে রোযার ব্যাপারে অনেক সীমাবদ্ধতা ছিল। ছিল অনেক বাড়াবাড়ি একটানা চল্লিশ দিন পর্যন্ত আহার গ্রহন নিষিদ্ধ ছিল। আবার কোন কোন ধর্মে এমন শিথিলতা ছিল যে শুধু গোশত জাতীয় খাবার বর্জন করাকেই যথেষ্ট মনে করা হতো।
কিন্তু ইসলাম মাত্রাতিরিক্ত বাড়াবাড়ি এবং প্রয়োজনাতিরিক্ত উদারতা কোনটাই সমর্থন করেনা।
ইয়াহুদী সম্প্রদায় শুধু ইফতারে খাদ্য গ্রহন করত আর সারাদিনে খাদ্য গ্রহন করত না।
সুতরাং আমরা ইয়াহুদীদের মত করব না। সেহরির সময় সেহরির এবং যথাসময়ে ইফতার করব।
সারাদিন নিষিদ্ধ কাজ গুলো থেকে বিরত থাকব।
আবুহুরাইরা( রাঃ) হইতে বর্ণিত যে, নবী কারীম (সঃ) বলিয়াছেন, যে ব্যক্তি (রোযা অবস্থায়) মিথ্যাচার ও অন্যায় কর্ম ত্যাগ করিল না,তাহার পানাহার ত্যাগ করার প্রতি আল্লাহর কোন প্রয়োজন নাই।(বুখারি, হাদিস নং১৯০৩)
রোযা হচ্ছে তাকওয়া অর্জনের অন্যতম মাধ্যম। আর তাকওয়া হচ্ছে হৃদয়ের এক বিশেষ অবস্থার নাম
ঐ অবস্থা অর্জিত হওয়ার পরে মানুষের অন্তর আল্লাহর প্রতি আকৃষ্ট হয় এবং খারাপ কাজ থেকে ফিরে আসে।রোযা যেন নিছক একটি আনুষ্ঠানিকতায় পরিনত না হয় এবং তা যেন একমাত্র আল্লাহর সন্তুুষ্টির জন্য হয়। এজন্য রাসুল( সঃ) ইমান ও এহতিসাব তথা আল্লাহর সন্তুুষ্টি অর্জন এবং উত্তম বিনিময় লাভের কথা বিশেষ ভাবে উল্লেখ করে বলেছেন-; যে ব্যক্তি ঈমান সহ নেকী হাসিলের উদ্দেশ্যে রোযা রাখবে তার অতীতের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে।(কাযীখান ১ম খন্ড)
সুতরাং আমরা যেন সকলে রোযার গুরুত্ব ও তাৎপর্য বুঝে নেক আমল করতে পারি আল্লাহ আমাদের সেই তৌফিক দান করেন। আমিন।
সম্পাদনাঃমোঃ সাইফুল ইসলাম।