ঢাকা ০৬:২০ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৪, ১ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বরিশালে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের সেই কর্মকর্তাকে বদলি

  • বার্তা কক্ষ
  • আপডেট সময় : ০৮:৩৮:১৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২০
  • ৮৫৮ বার পড়া হয়েছে

নিউজ ডেস্ক:: বরিশাল মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কার্যালয়ে সংবাদকর্মী নির্যাতনের একদিনের মাথায় প্রতিষ্ঠানটির শীর্ষ কর্মকর্তাকে শাস্তিস্বরুপ বদলি করা হয়েছে। এক সপ্তাহ সময় দিয়ে অতিরিক্ত পরিচালক এএএম হাফিজুর রহমানকে ময়মনসিংহ বিভাগীয় অফিসে একই পদে যোগদানের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বরিশালে নতুন কর্মকর্তা হিসেবে আসছেন সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ে কর্মরত পরিতোষ কুমার কুন্ড। সংস্থাটির উপ-পরিচালক প্রশাসন মোহাম্মদ মামুন স্বাক্ষরিত এক নোটিশ রোববার মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে তুলে ধরা হয়েছে। কী কারণে তাকে চলমান করোনা ভাইরাস দুর্যোগের মাঝে বদলি করা হয়ে এই সংক্রান্ত বিষয় উল্লেখ না করলেও বোঝার অপেক্ষা নেই যে তাকে সংবাদকর্মী প্রহরের ঘটনায় বদলি করা হয়েছে।

অবশ্য বদলি নোটিশ হাতে পাওয়ার কথা জানিয়ে অতিরিক্ত পরিচালক হাফিজুর রহমান নিজেও স্বীকার করেছেন তার কার্যালয়ের অভ্যন্তরে সংবাদকর্মী হামলার শিকার হওয়ার কারণেই তাকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তবে এই কর্মকর্তা এই আদেশকে শাস্তিমূলক বলতে নারাজ।

উল্লেখ- করোনা ভাইরাস মহামারির কারণে সরকারের পক্ষ থেকে ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা হওয়ায় সরকারি-বেসরকারি সকল প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও বরিশাল মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর অফিস কার্যালটিতে মাদক ক্রয়-বিক্রয় চলছিল। বরিশাল জেলা প্রশাসন ঘোষিত ‘লকডাউন’ উপেক্ষা করে শনিবার সকালে বিভিন্ন স্থান থেকে আগত অন্তত অর্ধশত ব্যক্তির কাছ থেকে বাড়তি মূল্য রেখে মদ বিক্রি করে অফিস স্টাফরা। মূল ফটক আটকে মাদক লেনদেনের এই খবরে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের একাধিক প্রতিনিধিসহ সংবাদকর্মীরা সেখানে উপস্থিত হন। এসময় বাংলাভিশনের ক্যামেরাপারসন কামাল হাওলাদার দেয়াল টপকে অভ্যন্তরে প্রবেশ করে গোপনে মাদক লেনদের ভিডিও ধারণ করলে এতে ক্ষুব্ধ হয়ে অফিস স্টাফ হাসিব, ড্রাইভার রাজনসহ ৫ থেকে ৬জন তাকে ধরে নিয়ে মারধর শুরু করে। এসময় কার্যালয়ের বাইরে অবস্থানরত সংবাদকর্মীরা তাকে ছেড়ে দিতে ডাক-চিৎকার করলেও তাতে কর্ণপাত না করে কামালকে মারতে মারতে একপর্যায়ে কার্যালয়ের ভেতরে নিয়ে যায়।

পরে সংবাদকর্মীরা বিষয়টি জেলা প্রশাসককে অবহিত করলে র‌্যাবের সমন্বয়ে একটি ভ্রাম্যমাণ আদালত এসে সংবাদকর্মী কামালকে উদ্ধার করে। কিন্তু এরআগে কামালকে ভবনের ভেতরে আটকে বেধম মারধর করে এবং বাংলাভিশন টিভি চ্যানেলের ক্যামেরাটি আছড়ে ভেঙে ফেলে। এমনকি তাকে মারধরের একপর্যায়ে টানতে টানতে ভবনের তৃতীয় তলায় অবস্থানরত বিভাগীয় কর্মকর্তা হাফিজুর রহমানের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। এবং সেখানেও তার উপস্থিতিতে আকের দফা অফিস স্টাফরা মারধর করে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়- সংবাদকর্মী কামালকে উদ্ধারের সাথে সাথে ভ্রাম্যমাণ আদালত কার্যালয়ের ভেতর থেকে অন্তত ২০ কন্টিনভর্তি মদ উদ্ধার করে। এবং মাদকের গোডাউনটি তালাবদ্ধ করে দিয়ে অতিরিক্ত পরিচালককে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে নিয়ে যায়। সেখানে সাংবাদিকদের কাছে তিনি ক্ষমা প্রার্থনা করলেও জেলা প্রশাসকের পরামর্শে বাংলাভিশনের ব্যুরো চিফ শাহীন হাসান একটি লিখিত অভিযোগ করেন।

একটি সূত্র জানায়- ওই অভিযোগের ভিত্তিতে পুরো বিষয়টি বরিশাল জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে অবহিত করেন। এবং ঘটনাটি তদন্ত করে সংবাদকর্মী নির্যাতনে জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তির সুপারিশ রাখেন। অনুমান, সেই সুপারিশের ভিত্তিতেই বরিশাল বিভাগীয় অফিসের কর্মকর্তা হাফিজুর রহমানকে শাস্তিমুলক বদলি করে আগামী ২৬ এপ্রিল নতুন কর্মস্থল ময়মনসিংয়ে যোগদান আদেশ দেয় সংস্থটি।

এদিকে বরিশাল কার্যালয়ের একটি সূত্র জানায়- শীর্ষ কর্মকর্তাকে বদলি করার আগেই শনিবার তিনি জড়িত স্টাফদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা চেয়ে একটি আবেদন করেছেন। ফলে যেকোন সময় অফিস স্টাফ হাসিব, ড্রাইভার রাজনসহ ৫ থেকে ৬ জনের বিরুদ্ধে শাস্তিস্বরুপ একই আদেশ আসতে পারে।

অপর একটি সূত্র জানায়- সংবাদকর্মী নির্যাতনে জড়িতরা দীর্ঘদিন ধরে অফিস কার্যালয় থেকে বেআইনীভাবে মাদক বিক্রি করে আসছিলেন। লাইসেন্সবিহীন এমন ব্যক্তি বিশেষের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ নিয়ে মাদক লেনদেনের এই ঘটনা সম্পর্কে কর্মকর্তা ওয়াকিবহাল থাকলেও ছিলেন নিরব-নিশ্চুপ। অভিযোগ রয়েছে- তিনিও মাদক বিক্রি অর্থের একটি বড় অংশ হস্তগত করতেন। এই কারণেই কর্মকর্তার বলে বলিয়ান হলে সাধারণ ছুটি ও ‘লকডাউন’র মাঝেও মাদক বিক্রির সাহস দেখিয়েছে অফিস স্টাফরা।

এ অভিযোগ অস্বীকার করে অতিরিক্ত পরিচালক এএএম হাফিজুর রহমান বলছেন- সাধারণ ছুটিতে মদ বিক্রির ক্ষেত্রে কোন বাধ্যবাধকতা নেই। তবে সংবাদকর্মীরা সাথে যেটা হয়েছে, তা অমানবিক। বিষয়টি শনিবারই কেন্দ্রীয় অফিসকে একটি আবেদনে জানিয়ে জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তির সুপারিশ করা হয়েছে।

কিন্তু অফিস স্টাফদের বিরুদ্ধে কোন শাস্তি বা বদলির আদেশ আসার আগেই শীর্ষ কর্মকর্তাকে সরিয়ে নেয়া হয়।
তথ্য ও সূত্র : বরিশাল টাইমস।

ট্যাগস :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

আপলোডকারীর তথ্য

বরিশালে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের সেই কর্মকর্তাকে বদলি

আপডেট সময় : ০৮:৩৮:১৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২০

নিউজ ডেস্ক:: বরিশাল মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কার্যালয়ে সংবাদকর্মী নির্যাতনের একদিনের মাথায় প্রতিষ্ঠানটির শীর্ষ কর্মকর্তাকে শাস্তিস্বরুপ বদলি করা হয়েছে। এক সপ্তাহ সময় দিয়ে অতিরিক্ত পরিচালক এএএম হাফিজুর রহমানকে ময়মনসিংহ বিভাগীয় অফিসে একই পদে যোগদানের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বরিশালে নতুন কর্মকর্তা হিসেবে আসছেন সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ে কর্মরত পরিতোষ কুমার কুন্ড। সংস্থাটির উপ-পরিচালক প্রশাসন মোহাম্মদ মামুন স্বাক্ষরিত এক নোটিশ রোববার মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে তুলে ধরা হয়েছে। কী কারণে তাকে চলমান করোনা ভাইরাস দুর্যোগের মাঝে বদলি করা হয়ে এই সংক্রান্ত বিষয় উল্লেখ না করলেও বোঝার অপেক্ষা নেই যে তাকে সংবাদকর্মী প্রহরের ঘটনায় বদলি করা হয়েছে।

অবশ্য বদলি নোটিশ হাতে পাওয়ার কথা জানিয়ে অতিরিক্ত পরিচালক হাফিজুর রহমান নিজেও স্বীকার করেছেন তার কার্যালয়ের অভ্যন্তরে সংবাদকর্মী হামলার শিকার হওয়ার কারণেই তাকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তবে এই কর্মকর্তা এই আদেশকে শাস্তিমূলক বলতে নারাজ।

উল্লেখ- করোনা ভাইরাস মহামারির কারণে সরকারের পক্ষ থেকে ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা হওয়ায় সরকারি-বেসরকারি সকল প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও বরিশাল মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর অফিস কার্যালটিতে মাদক ক্রয়-বিক্রয় চলছিল। বরিশাল জেলা প্রশাসন ঘোষিত ‘লকডাউন’ উপেক্ষা করে শনিবার সকালে বিভিন্ন স্থান থেকে আগত অন্তত অর্ধশত ব্যক্তির কাছ থেকে বাড়তি মূল্য রেখে মদ বিক্রি করে অফিস স্টাফরা। মূল ফটক আটকে মাদক লেনদেনের এই খবরে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের একাধিক প্রতিনিধিসহ সংবাদকর্মীরা সেখানে উপস্থিত হন। এসময় বাংলাভিশনের ক্যামেরাপারসন কামাল হাওলাদার দেয়াল টপকে অভ্যন্তরে প্রবেশ করে গোপনে মাদক লেনদের ভিডিও ধারণ করলে এতে ক্ষুব্ধ হয়ে অফিস স্টাফ হাসিব, ড্রাইভার রাজনসহ ৫ থেকে ৬জন তাকে ধরে নিয়ে মারধর শুরু করে। এসময় কার্যালয়ের বাইরে অবস্থানরত সংবাদকর্মীরা তাকে ছেড়ে দিতে ডাক-চিৎকার করলেও তাতে কর্ণপাত না করে কামালকে মারতে মারতে একপর্যায়ে কার্যালয়ের ভেতরে নিয়ে যায়।

পরে সংবাদকর্মীরা বিষয়টি জেলা প্রশাসককে অবহিত করলে র‌্যাবের সমন্বয়ে একটি ভ্রাম্যমাণ আদালত এসে সংবাদকর্মী কামালকে উদ্ধার করে। কিন্তু এরআগে কামালকে ভবনের ভেতরে আটকে বেধম মারধর করে এবং বাংলাভিশন টিভি চ্যানেলের ক্যামেরাটি আছড়ে ভেঙে ফেলে। এমনকি তাকে মারধরের একপর্যায়ে টানতে টানতে ভবনের তৃতীয় তলায় অবস্থানরত বিভাগীয় কর্মকর্তা হাফিজুর রহমানের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। এবং সেখানেও তার উপস্থিতিতে আকের দফা অফিস স্টাফরা মারধর করে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়- সংবাদকর্মী কামালকে উদ্ধারের সাথে সাথে ভ্রাম্যমাণ আদালত কার্যালয়ের ভেতর থেকে অন্তত ২০ কন্টিনভর্তি মদ উদ্ধার করে। এবং মাদকের গোডাউনটি তালাবদ্ধ করে দিয়ে অতিরিক্ত পরিচালককে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে নিয়ে যায়। সেখানে সাংবাদিকদের কাছে তিনি ক্ষমা প্রার্থনা করলেও জেলা প্রশাসকের পরামর্শে বাংলাভিশনের ব্যুরো চিফ শাহীন হাসান একটি লিখিত অভিযোগ করেন।

একটি সূত্র জানায়- ওই অভিযোগের ভিত্তিতে পুরো বিষয়টি বরিশাল জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে অবহিত করেন। এবং ঘটনাটি তদন্ত করে সংবাদকর্মী নির্যাতনে জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তির সুপারিশ রাখেন। অনুমান, সেই সুপারিশের ভিত্তিতেই বরিশাল বিভাগীয় অফিসের কর্মকর্তা হাফিজুর রহমানকে শাস্তিমুলক বদলি করে আগামী ২৬ এপ্রিল নতুন কর্মস্থল ময়মনসিংয়ে যোগদান আদেশ দেয় সংস্থটি।

এদিকে বরিশাল কার্যালয়ের একটি সূত্র জানায়- শীর্ষ কর্মকর্তাকে বদলি করার আগেই শনিবার তিনি জড়িত স্টাফদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা চেয়ে একটি আবেদন করেছেন। ফলে যেকোন সময় অফিস স্টাফ হাসিব, ড্রাইভার রাজনসহ ৫ থেকে ৬ জনের বিরুদ্ধে শাস্তিস্বরুপ একই আদেশ আসতে পারে।

অপর একটি সূত্র জানায়- সংবাদকর্মী নির্যাতনে জড়িতরা দীর্ঘদিন ধরে অফিস কার্যালয় থেকে বেআইনীভাবে মাদক বিক্রি করে আসছিলেন। লাইসেন্সবিহীন এমন ব্যক্তি বিশেষের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ নিয়ে মাদক লেনদেনের এই ঘটনা সম্পর্কে কর্মকর্তা ওয়াকিবহাল থাকলেও ছিলেন নিরব-নিশ্চুপ। অভিযোগ রয়েছে- তিনিও মাদক বিক্রি অর্থের একটি বড় অংশ হস্তগত করতেন। এই কারণেই কর্মকর্তার বলে বলিয়ান হলে সাধারণ ছুটি ও ‘লকডাউন’র মাঝেও মাদক বিক্রির সাহস দেখিয়েছে অফিস স্টাফরা।

এ অভিযোগ অস্বীকার করে অতিরিক্ত পরিচালক এএএম হাফিজুর রহমান বলছেন- সাধারণ ছুটিতে মদ বিক্রির ক্ষেত্রে কোন বাধ্যবাধকতা নেই। তবে সংবাদকর্মীরা সাথে যেটা হয়েছে, তা অমানবিক। বিষয়টি শনিবারই কেন্দ্রীয় অফিসকে একটি আবেদনে জানিয়ে জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তির সুপারিশ করা হয়েছে।

কিন্তু অফিস স্টাফদের বিরুদ্ধে কোন শাস্তি বা বদলির আদেশ আসার আগেই শীর্ষ কর্মকর্তাকে সরিয়ে নেয়া হয়।
তথ্য ও সূত্র : বরিশাল টাইমস।