নিউজ ডেস্ক//চলমান জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশনে করোনাভাইরাসের কারণে ২৫ জন এমপিকে সংসদে না যাওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। তাদের কেউ কেউ সিনিয়র হওয়ায়, কেউ অসুস্থ, আবার কারও পরিবারের সদস্য অসুস্থ হওয়ায় সংসদ অধিবেশনে যোগ না দিতে অনুরোধ করা হয়েছে। এছাড়া একজন এমপি হাসপাতালের মালিক হওয়ায় তাকেও সংসদে না আসার অনুরোধ করা হয়েছে।
সংসদ হুইপের কার্যালয় থেকে ওই ২৫ এমপির তালিকা করে তাদের সংসদে না আসার অনুরোধ জানানো হয়। তালিকা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, কয়েকজন ছাড়া বেশির ভাগ এমপি-মন্ত্রীকে তিন কার্যদিবসের বেশি সংসদে যোগ না দেয়ার অনুরোধ করা হয়েছে। তবে সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বী মিয়া, সংসদের চিফ হুইপ নূর-ই-আলম সিদ্দিকীসহ মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের এ বিষয়ে তেমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। তারা তিনদিনের বেশি সংসদে যেতে পারবেন। এমনকি বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মসিউর রহমান রাঙ্গা সব কার্যদিবসে উপস্থিত থাকতে পারবেন।
তবে ওই তালিকা করার পর বেশ কয়েকজন এমপি-মন্ত্রী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। মারা যান ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ।
সিনিয়র হওয়ায় আওয়ামী লীগের ঠাকুরগাঁও-২ আসনের দবিরুল ইসলাম, নওগাঁ-৪ আসনের মুহাম্মদ ইমাজ উদ্দিন প্রামাণিক, পাবনা-৩ আসনের মকবুল হোসেন, পটুয়াখালী-১ আসনের মো. শাহজাহান মিয়া, বরিশাল-১ আসনের আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ, জামালপুর-১ আসনের আবুল কালাম আজাদ, শেরপুর-৩ আসনের এ কে এম ফজলুল হক, নরসিংদী-৫ আসনের রাজি উদ্দিন আহমেদ, ময়মনসিংহ-৬ আসনের মোসলেম উদ্দিন, আওয়ামী লীগের সংরক্ষিত আসনের এমপি বেগম জিন্নাতুল বাকিয়া, শেখ এ্যানি রহমান, মোছাম্মদ তাহমিনা বেগম, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সংরক্ষিত নারী আসনের বেগম লুৎফুন্নেসা খান ও জাতীয় পার্টির (জেপি) পিরোজপুর-২ আসনের আনোয়ার হোসেনকে সংসদে না আসার অনুরোধ করা হয়েছে।
অন্যদিকে, নিজে অসুস্থ হওয়ায় আওয়ামী লীগের নওগাঁ-২ আসনের শহীদুজ্জামান সরকার ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমকেও সংসদে না আসার অনুরোধ করা হয়। এরই মধ্যে অসুস্থজনিত কারণে মারা যান মোহাম্মদ নাসিম। প্রথমে করোনা পজিটিভ হলেও পরবর্তীতে তার নেগেটিভ রিপোর্ট আসে।
অন্যদিকে খুলনা-১ আসনের পঞ্চানন বিশ্বাস, জামালপুর-২ আসনের ফরিদুল হক খান দুলাল, নোয়াখালী-১ আসনের এইচ এম ইব্রাহিম, নোয়াখালী-৪ আসনের মো. ইকরামুল হক চৌধুরী ও চট্টগ্রাম-৬ আসনের এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী অসুস্থ হওয়ায় সংসদে না আসার অনুরোধ করা হয়েছে।
যশোর-৩ আসনের আওয়ামী লীগের কাজী নাবিল আহমেদের স্ত্রী ও মেয়ে অসুস্থ হওয়ায় তাকেও সংসদে না আসার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। টাঙ্গাইল-৬ আসনের আহসানুল হক টিটুর বাবা মারা যাওয়ায় এবং সংরক্ষিত নারী আসনের বেগম আদিবা আনজুম মিতার স্বামী অসুস্থ থাকায় তাদের সংসদে না আসার জন্য বলা হয়েছে।
লক্ষ্মীপুর-১ আসনের আওয়ামী লীগের এমপি আনোয়ার হোসেন খান হাসপাতালের মালিক হওয়ায় তাকে সংসদে না যাওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। তিনি রাজধানীর আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজের মালিক। হাসপাতালটিতে করোনা রোগীদের চিকিৎসা চলছে।
বিএনপির সংরক্ষিত নারী আসনের রুমিন ফারহানা ও স্বতন্ত্র সেলিনা ইসলামকে চার কার্যদিবস সংসদে যোগ দেয়ার জন্য তালিকায় নাম রাখা হয়েছিল। বিএনপির চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের হারুন-অর-রশীদকে সংসদের পাঁচ কার্যদিবস যোগ দেয়ার জন্যও নাম রাখা হয়েছিল কিন্তু করোনার কারণে সংসদের কার্যদিবস আরও সংক্ষিপ্ত করায় বাকি দিনে তাদের সংসদে যাওয়া হচ্ছে না।
এ বিষয়ে সরকারি দলের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, করোনাভাইরাসজনিত বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে তারা স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে প্রবীণ ও অসুস্থ সংসদ সদস্যদের অধিবেশনে আসতে নিরুৎসাহিত করছেন। তবে কাউকে অধিবেশনে যোগ দিতে নিষেধ করা হয়নি। যারা করোনা পজিটিভ, তাদের সবাইকে নিষেধ করা হয়েছে। সবার কথা বিবেচনা করেই এ কাজ করা হয়েছে।
তবে সিনিয়র হওয়া সত্ত্বেও সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, বাগেরহাট- ১ আসনের শেখ হেলাল উদ্দীন, সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হক, পটুয়াখালী-২ আসনে আ স ম ফিরোজ, ভোলা-১ আসনের তোফায়েল আহমেদ, সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ, ঢাকা-৬ আসনের কাজী ফিরোজ রশীদ, স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য ও ঢাকা-৭ আসনের হাজী মোহাম্মদ সেলিম, ঢাকা-৮ আসনের রাশেদ খান মেনন, ঢাকা-১১ আসনের এ কে এম রহমতউল্লাহ, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও ঢাকা-১৮ আসনের সাহারা খাতুন, সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, গোপালগঞ্জ-২ আসনের শেখ ফজলুল করিম সেলিম, ফরিদপুর-২ আসনের খন্দকার মোশাররফ হোসেন, সাবেক নৌমন্ত্রী ও মাদারীপুর-২ আসনের এমপি শাজাহান খান, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, মৌলভীবাজার-২ আসনের (গণফোরাম) এমপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদসহ অনেকের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি সংসদ।
এ ব্যাপারে সংসদের এক সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন, মূলত যারা সংসদীয় কাজে কোনো ভূমিকা রাখেন না, সেসব সিনিয়রদের সংসদে না আসার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। তবে করোনার ভয়ে এসব সিনিয়রদের অনেকেই সংসদে আসছেন না। আবার তালিকার বাইরেও কেউ কেউ আসছেন। তবে তা খুবই নগণ্য