অনলাইন ডেস্কঃ বরিশালের গৌরনদীর একটি রেস্টুরেন্টে রমজান মাসে সাহরি খাইয়ে ঢাকা-বরিশাল হাইওয়ে যাত্রীদের কাছ থেকে কোনো টাকা রাখেন না প্রতিষ্ঠানটির মালিক। মাতাব্বর হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টের মালিক মোঃ আবদুর রশিদ জানান, তিনি ১১ মাস ব্যবসা করেন আর রমজান মাসে ফ্রি সাহরি খাওয়ান।
মঙ্গলবার (২৮ মে) রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমনই একটি স্টাটাস দিয়েছেন বরগুনা কোর্টের অ্যাডভোটেক আবদুল্লাহ আল সাইদ। তিনি সোমবার রাতে ঢাকা থেকে বরিশাল যাওয়ার পথে ওই হোটেলে খেতে গিয়ে দোকানি টাকা না রাখার কথাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করেন।
তার দেয়া স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো-
‘রমজানের রোজার মধ্যে রাতের বাসে হাইওয়েতে যাতায়াত করা আমাদের জন্য খুব দুশ্চিন্তার বিষয় না হলেও মোটামুটি চিন্তার বিষয়।
কারণ ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়ের মতো আমাদের ঢাকা বরিশাল হাইওয়েতে খুব ভালো মানের খাবার হোটেল পাওয়া যায় না। তাই সাহরি খাওয়ার জন্য আমাদের ভরসা করতে হয় রাস্তার পাশে মোটামুটি মানের খাবার হোটেলের ওপর।
এই ভরসার মধ্যে দুইটি চিন্তার বিষয় হল খাবারের মান এবং খাবারের অতিরিক্ত মূল্য। খাবারের মূল্য অনেক সময় হোটেল মালিকরা দ্বিগুন থেকে তিনগুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করে থাকেন। যাত্রীরা মোটামুটি বাধ্য থাকেন হোটেল মালিকের নির্ধারিত মূল্যে খাবার গ্রহণ করার জন্য। কারণ তাদের হাতে কোনো বিকল্প উপায় থাকে না।
যাত্রীদের এই অসহায়ত্বের সম্পূর্ণ সুযোগ গ্রহণ করে হোটেল মালিকরা। তার মধ্যে পুরাতন পচা-বাসি খাবার তো আছেই। আমরা যারা রোজার মধ্যে ঢাকা থেকে বাড়িতে আসার জন্য রাতের বাসে যাতায়াত করি তারা এই বিষয় গুলোর ওপরে মোটামুটি অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি।
আমি কিছুদিন আগে একটি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার জন্য ঢাকায় গমণ করি এবং পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে গতকাল (সেমাবার) রাত ৯ টায় সাকুরা পরিবহনের একটি বাসে ঢাকা থেকে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা করি।
বাসে উঠে বাসের সুপারভাইজারের সঙ্গে সাহরি খাওয়ার বিষয় নিয়ে কথা বললাম এবং সে আমাকে আশ্বস্ত করল রাত ৩ টার দিকে যে স্থানে হোটেল পাওয়া যাবে ওই স্থানে আমাদেরকে সাহরি খাওয়ানোর জন্য বাস থামানো হবে।
রাতে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের গৌরনদী বাসস্ট্যান্ডে বাস থামল। যে হোটেলের সামনে বাসটি থামল ওই হোটেলের সামনে আরও ১০ থেকে ১২ টি বাস থামানো ছিল। ঢাকা-বরিশাল রুটে চলাচলরত ভালো মানের অধিকাংশ বাসই ওই হোটেলের সামনে থামানো দেখতে পেলাম।
যাত্রীদের সাহরি খাওয়ার জন্য একসঙ্গে অনেকগুলো বাস এই হোটেলটির সামনে থামায় হোটেলটিতে অনেক ভিড় হয়ে গেল। আমি সাহরি খাওয়ার জন্য হোটেলের খাবার টেবিলের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলাম এবং কিছুক্ষণ পরে একটি চেয়ার খালি হলে আমি ওই চেয়ারটিতে বসি। আমি খাবারের কোনো দাম জিজ্ঞেস না করে খাওয়া শুরু করলাম কিন্তু আমার পাশে একজন যাত্রী হোটেলের বয়কে দাম জিজ্ঞেস করতেই বয় উত্তর দিল দাম লাগবে না কি খাইবেন বলেন।
কথাটা শুনে তখনও বুঝতে পারিনি বিষয়টা কী। আমি খাওয়া শেষ করে বিল দেওয়ার জন্য হোটেলের ম্যানেজারের কাছে যাই। তিনি আমাকে বিনয়ের সঙ্গে বললেন টাকা দেওয়া লাগবে না। আমি বিষয়টি বুঝতে পারলাম না। তাই আবার তাকে জিজ্ঞেস করলাম কেন টাকা দেওয়া লাগবে না। সে আমাকে জানাল বাবা বছরে ১১ মাস ব্যবসা করি এক মাস আল্লাহর খেদমত করি।
আমি একটু অবাক হয়ে গেলাম এবং বিষয়টি ভালো করে বোঝার চেষ্টা করলাম। জানতে পারলাম তিনি হোটেলের ম্যানেজার নন, তিনি হোটেলের মালিক। রমজান মাসে কারও কাছে হোটেলের খাওয়া বাবদ কোনো টাকা গ্রহণ করেন না।
আমার মতো কৌতুহলী হয়ে অনেক যাত্রী তার কাছ থেকে বিষয়টা বোঝার চেষ্টা করল। অনেক যাত্রী অবাক হয়ে হোটেলের মালিকের দিকে তাকিয়ে রইল। তার হোটেলের বয়রাও অনেক আন্তরিক। যে কোনো একজন খাবারের জন্য চেয়ারে বসলেই সঙ্গে সঙ্গে জিজ্ঞেস করে কি খাবেন মাছ না মাংস। মাছ হলে কোন মাছ মাংস আর মাংস হলে কিসের মাংস।
যেখানে বাংলাদেশ রমজান মাসে ব্যবসায়ীরা পণ্য মজুদদারি করে মূল্য বৃদ্ধি করে। ভেজাল পচা-বাসি এবং অতিরিক্ত মূল্যে পণ্য বিক্রির দায়ে ম্যাজিস্ট্রেট মোবাইলকোর্ট পরিচালনা করে নামি দামি খাবার হোটেলগুলোতে জরিমানা করেন।
সেখানে গৌরনদী বাসস্ট্যান্ডের কাছে এই হোটেল মালিক স্রোতের বিপরীতে ব্যবসা করা একজন মানুষ। যে মানুষ রমজান মাসে রোজাদারদের খেদমত করার জন্য এই ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে সে অবশ্যই কোনো সময় পচা-বাসি খাবার বিক্রি করতে পারেন না। এটা আমার বিশ্বাস।
ভালো থাকুক এই ভালো মানুষগুলো এবং তাদের কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করুক আমাদের দেশে বড় বড় ব্যবসায়ীরা।’