বিশেষ প্রতিবেদনঃ অর্থের অভাবে একবেলা খেয়ে দিন কাটানো বরিশাল নগরীর পলাশপুর গুচ্ছগ্রামের রহমানিয়া কিরাতুল কুরআন হাফেজিয়া মাদরাসা ও এতিমখানার শিশুদের পাশে দাঁড়িয়েছেন জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান। শনিবার বিকেলে নগরীর ৫ নম্বর ওয়ার্ডের পলাশপুর গুচ্ছগ্রামের ৭ নম্বর গলির ওই এতিমখানা পরিদর্শনে যান জেলা প্রশাসক।
এ সময় তিনি এতিম শিশু ও মাদরাসা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেন এবং তাদের খোঁজখবর নেন। সব কিছু শুনে জেলা প্রশাসক এতিম শিশুদের খাবারের জন্য নগদ ১০ হাজার টাকা এবং দুই টন সরকারি চাল বরাদ্দ দেন। এছাড়া আগামী ছয় মাসের চাল দেয়ার আশ্বাস দেন।
গত বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) ওই মাদরাসা ও এতিমখানার আর্থিক দৈন্যদশার চিত্র তুলে ধরে “মুড়ি খেয়ে কাটছে দিন, সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন” শিরোনামে ধানসিঁড়ি নিউজ.কম সংবাদ প্রকাশ হয়। এছাড়া বেশ কয়েকটি জাতীয় ও আঞ্চলিক অনলাইন এবং দৈনিকেও সংবাদ প্রকাশ হয়।
ধানসিঁড়ি নিউজে প্রকাশিত সংবাদটি অনেক পাঠকের মনে নাড়া দেয়। এরপর বেশ কয়েকজন ধানসিঁড়ি নিউজের ফেসবুক পেজ থেকে এতিমখানা সম্পর্কে খোঁজ খবর নিয়ে কর্তৃপক্ষের ফোন নম্বর নিয়ে যোগাযোগ করেন।
বরিশালের জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান জানান, অনাথ ও এতিম শিশু-কিশোরদের পাশে দাঁড়ানো আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধ থেকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। নগদ ১০ হাজার টাকা এবং ২ টন সরকারি চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে এতিম শিশুদের জন্য। এছাড়া আগামী ছয় মাসের চাল দেয়ারও ব্যবস্থা করা হবে। কোনো অবস্থায়ই যাতে এতিমখানার শিক্ষার্থীদের খাবার সরবরাহে ব্যাঘাত না ঘটে সে ব্যাপারে আগামীতেও যথাসাধ্য চেষ্টা করা হবে বলেও তিনি জানান।
এতিমখানার পরিচালক ফিরোজ হাওলাদার বলেন, এতিম শিশুদের খাবারের অর্থ জোগাড় করতে রীতিমতো সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হচ্ছিল। খাবার কেনার অর্থ না থাকায় একবেলা খেয়ে দিন কাটছিল মাদরাসা ও এতিমখানার শিশুদের। যে দিন কেউ অর্থ দিয়ে সহায়তা করতো সেদিন কোনো রকমে দুই বেলার খাবার জোটতো ওই এতিম শিশুদের। সাহায্য না পেলে সেদিন চিড়া-মুড়ি খেয়ে দিন পার করতে হয় তাদের। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় খবর প্রকাশের পর অনেকেই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন, এখন অবস্থার অনেকটাই পরিবর্তন হয়েছে। অন্তত ১০ জন মানুষ সাহায্য করেছেন, আজ জেলা প্রশাসক মহোদয়ও সাহায্য করেছেন। যারা সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা আর শ্রদ্ধা জানানোর ভাষা নেই।
মাদ্রাসার শিক্ষক হাফেজ মোঃ জহিরুল ইসলাম জানান, ২০১৪ সালে ফিরোজ হাওলাদারের উদ্যোগে পলাশপুর গুচ্ছ গ্রামে এতিমখানা ও মাদ্রাসা চালু করা হয়। তখন ছাত্র সংখ্যা ছিল কম। বর্তমানে ছাত্র সংখ্যা ১০৮ জন। এর মধ্যে আবাসিক ছাত্র সংখ্যা ৫২ জন। এতিম শিশু রয়েছে ২০ জন। আবাসিক ৫২ জন ছাত্রকে প্রতিদিন তিনবেলা খাবার সরবারহ করা হয়। তাদের খাবার সরবারহের অর্থ জোগাড় করতে হিমশিম খেতে হচ্ছিল।
তিনি আরও জানান, এতিমখানা ও মাদ্রাসা চালুর পর কয়েকটি কক্ষ নিয়ে একটি ভাড়া বাসায় তা পরিচালনা করা হতো। এতিমখানা ও মাদ্রাসার দৈন্যদশার খবর পেয়ে ৯ মাস আগে বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সংসদ সদস্য আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ জেলা পরিষদের মাধ্যমে ১৫ লাখ টাকা অনুদান প্রদান করেন। ওই টাকা তুলতে গিয়ে প্রায় দেড় লাখ টাকা ভ্যাট দিতে হয়েছে। বাকি সাড়ে ১৩ লাখ টাকার মধ্যে ৬ লাখ টাকা দিয়ে জমি কেনা হয়। এরপর বাকি টাকা দিয়ে ভবন নির্মাণের কাজ চলছে। এরই মধ্যে ৪ তলা ফাউন্ডেশনের ওই বিল্ডিংয়ের ১ তলার নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এরপর টাকার অভাবে নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়ে গেছে।