শাওন অরন্য:বরিশালে এখনো উদ্ধার হয়নি প্রায় ১২শ’ টন মাল বোঝাই কার্গো এমভি হাজী দুদু মিয়া।
গত বছর ১৪ ডিসেম্বর রাতে বরিশাল নদী বন্দরের সামান্য দূরে একেবারে মেইন চ্যানেলে যাত্রীবাহী লঞ্চ এমভি শাহরুখ-২’র সঙ্গে সংঘর্ষে কীর্তনখোলা নদীতে ডুবে যায় মালবোঝাই কার্গো এমভি হাজী দুদু মিয়া। কার্গো টি উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। এছাড়াও কীর্তনখোলা নদীর চরবাড়িয়া এবং চরমোনাইতে ২টি কার্গো ডুবে আছে ১ বছরেরও বেশি সময় ধরে।
পরিচয় গোপন রাখার শর্তে ঢাকা-বরিশাল নৌ রুটে চলাচলকারী যাত্রীবাহী লঞ্চের মাস্টার জানান,‘সাদা চোখে এ ১১টি কার্গো-বাল্কহেড ডুবির খবর জানলেও বাস্তবে এ সংখ্যা আরও বেশি। রাতে মালবাহী নৌযান চলাচলের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে যেসব মালিক কার্গো-বাল্কহেড চালান তারাও শাস্তির ভয়ে দুর্ঘটনার খবর গোপন রাখেন। প্রকৃতপক্ষে এ রুটে ১৮ থেকে ২০টি নৌযান নিমজ্জিত রয়েছে। এগুলো উদ্ধারে কোনো ব্যবস্থাও নেয়া হচ্ছে না।
এ রুটে চলাচলকারী জাহাজ এমভি সুন্দরবনের মাস্টার মহিবুর রহমান বলেন, ‘ডুবে থাকা নৌ-যানের কারণে বেশ খানিকটা ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হয় আমাদের। নিমজ্জিত নৌযানগুলোর কারণে পলি জমে নাব্যতার আরও ক্ষতি করতে পারে। তেমন কিছু হলে ঢাকা-বরিশাল রুটে নৌযান চলাচলই বন্ধ হয়ে যাবে।’
বিআইডব্লিউটিএ বরিশালের বন্দর কর্মকর্তা এবং নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের উপ-পরিচালক আজমল হুদা সরকার মিঠু বলেন, ‘নদীবন্দর সংলগ্ন কীর্তনখোলায় নিমজ্জিত কার্গো দুদু মিয়া উদ্ধারে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ওই কার্গোতে থাকা ১২শ’ টন মালের অধিকাংশই তুলেছি আমরা। চলতি মাসের মধ্যেই এটি উদ্ধার করা হবে। এছাড়া মেইন চ্যানেল থেকে কার্গোটি টেনে বাইরে নেয়া হয়েছে।’
বিআইডব্লিউটি এর নৌ সংরক্ষণ ও পরিচালন বিভাগের যুগ্ম পরিচালক এসএম আজগর আলী বলেন, এসব নিয়ে শঙ্কার কারণ নেই। সর্বোচ্চ ভারি নৌ-যান চলতেও যেখানে ১৪ ফিটের বেশি গভীরতার দরকার হয় না সেখানে জাহাজটি পানির ৪০-৫০ ফিট গভীরে রয়েছে।’
বিআইডব্লিউটিএর একাধিক কর্মকর্তা জানান, ‘নিমজ্জিত নৌযান উদ্ধারে কর্তৃপক্ষের সক্ষমতা না থাকায় মূলত এসব জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। ৪টি উদ্ধারকারী জাহাজের ২টি রুস্তম এবং হামজা বর্তমানে বয়সের ভারে ন্যুব্জ। ১৯৬৫ সালে বহরে যোগ হওয়া হামজা রয়েছে আরিচা ঘাটে। এর উত্তোলন ক্ষমতা মাত্র ৬০ টন। মাওয়া ঘাটে থাকা রুস্তম বহরে যোগ দেয় ১৯৮৪ সালে। সমান ধারণক্ষমতাসম্পন্ন রুস্তম পার করেছে প্রায় ৫০ বছর। ২০১৩ সালে আমদানি করা দুই উদ্ধারকারী জাহাজ নির্ভিক এবং প্রত্যয়ের উত্তোলন ক্ষমতা ২৫০ টন করে। নির্ভিক বর্তমানে রয়েছে বরিশালে আর প্রত্যয় নারায়ণগঞ্জে। এই ৪টি উদ্ধারকারী জাহাজ মিলিয়ে যেখানে উত্তোলন ক্ষমতা ৬২০ টন সেখানে বরিশাল-ঢাকা নৌ চ্যানেলে নিমজ্জিত অবস্থায় থাকা প্রায় প্রতিটি কার্গো’র ওজন ১২শ’ থেকে ১৫শ’ টন। তার ওপর আবার রুস্তম এবং হামজা একযোগে উদ্ধারকাজ চালাতে পারলেও প্রত্যয় ও নির্ভিক তা পারে না। এগুলোকে কাজ লাগাতে হয় আলাদা-আলাদাভাবে।
প্রসঙ্গত, শনিবার রাতে বরিশাল নৌবন্দরের ডিসির ঘাট সংলগ্ন কীর্তনখোলা নদীতে বরগুনা থেকে ঢাকাগামী যাত্রীবাহী লঞ্চ শাহরুখ-২ এর সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে ক্লিংকার বোঝাই কার্গোটি ডুবে যায়। কার্গোটি নৌবন্দর থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে অ্যাংকর সিমেন্ট কোম্পানির ক্লিংকার নিয়ে যাচ্ছিল।
অন্যদিকে এমভি শাহরুখ-২ এর সামনের তলা ফেটে যায়। পরে নিরাপদে চরকাউয়া খেয়াঘাটে নেয়া হয় লঞ্চটি। কার্গোতে থাকা মাস্টার, সারেং, সুকানীসহ ১১ জন স্টাফ সাতরে তীরে উঠতে সক্ষম হন। এতে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।