রোজ শনিবার, ১৮ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৪ঠা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, রাত ৯:০৯


					
				
বরিশালে প্রায় পাঁচশত বছরের পূরনো ঐতিহাসিক মসজিদের সন্ধান

বরিশালে প্রায় পাঁচশত বছরের পূরনো ঐতিহাসিক মসজিদের সন্ধান

স্বচিত্র প্রতিবেদন: এটি একটি বহু পুরাতন মসজিদ, এটির কোনো নাম নেই। তবে স্থানীয়ভাবে মুশুড়িয়া গ্রামের নামে ‘মুশুড়িয়া মসজিদ’ নামে পরিচিত। এটি বাবুগঞ্জ উপজেলার মাধবপাশা ইউনিয়নের দারোগার হাট থেকে ৪ কিঃ মিঃ ভিতরে মুশরিয়া গ্রামে অবস্থিত। জনশ্রুতি রয়েছে, সম্রাট বাবর মতভেদে সম্রাট আকবর এর আমলে এটি নির্মাণ করা হয়েছিল। সেই হিসেবে এই মসজিদটির বয়স প্রায় ৫০০শত বছর বলে মনে করেন স্থানীয়রা। তবে কে বা কারা এটি নির্মাণ করেছিল তার সঠিক তথ্য কেহ বলতে পারেন নি।

এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা মোঃ মিজানুর রহমান, সরোয়ার হোসেন, মাওলানা আঃ ছালাম মাঝি এবং পার্শবর্তী গ্রামের মোঃ মনির হোসেন সহ কয়েক জনের সাথে মসজিদটির বিষয়ে কথা হয়। সকলেই প্রায় একই অভিমত ব্যক্ত করেন।

মসজিদটি প্রয়াত জনৈক অছিমদ্দি মাঝি’র পূর্ব পুরুষেরা দেখভাল করতেন। পরবর্তীতে প্রয়াত মাওলানা নূরুল হুদা সাহেব এটির দেখাশুনা করতেন বলে লোকমুখে প্রচলিত রয়েছে। মাওলানা নূরুল হুদা সাহেবের বাড়ির সন্নিকটেই মসজিদটির অবস্থান।

বর্তমানে এখানে একটি নতুন মসজিদ হয়েছে। মাওলানা আঃ ছালাম মাঝি উক্ত মসজিদের ইমাম। তিনি বলেন, তিনি এই মসজিদে নামাজ পড়েছেন। মসজিদটির চার কোণে চারটি গোলাকার পিলারের চূড়ায় চারটি মিনার ছিল এবং মাঝখানে একটি গম্বুজ ছিল। মিনার এবং গম্বুজ সময়ের ব্যবধানে ভেঙে গেছে। স্থানীয়রা একসময় এটি ভেঙে ফেলার উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল। কিন্তু পরবর্তীতে অতি পুরাতন স্থাপনা হিসেবে এটিকে ভাঙা থেকে বিরত থাকেন। মসজিদটিকে সংস্কার করে সংরক্ষণ করলে একটি অতি পুরাতন কৃষ্টি মানুষ দেখতে পারবে বলে ইমাম মাওলানা আঃ ছালাম অভিমত ব্যক্ত করেন।

মসজিদটি গাছপালা ঘেরা ঘন জঙ্গলের ভিতরে ছিল। এর পাশ থেকে পায়ে চলার একটি হালট ছিল, যেখান দিয়ে গ্রামের লোক চলাচল করত। সময়ের ব্যবধানে গাছপালা কেটে ফেলা হয়েছে এবং এর পাশ থেকে একটি পিচ ঢালাই রাস্তা নির্মাণ হওয়ার পরে মসজিদটি ঘন জঙ্গলের অন্তরাল থেকে দৃষ্টিগোচরে চলে এসেছে।

মসজিদটি এতই ছোট যে, এখানে ১জন ইমাম ও ৬জন মুসুল্লী মোট ৭জন নামাজ পড়ার মতো জায়গা রয়েছে। যখন মসজিদ নির্মাণ হয় তখন অত্র এলাকায় লোক বসতি খুবই কম ছিল। তখনকার সময় একসাথে ৫/৬ জনের বেশি নামাজী হতো না। তাই মসজিদটি সেই অনুসারে নির্মাণ করা হয়েছিল।

বরিশাল জেলা প্রশাসন তথা বাংলাদেশ সরকারের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ যদি মসজিদটির সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নিয়ে সংরক্ষণ করে তবে অতি পুরানো একটি ঐতিহাসিক ও পুরাকৃত্তিসম স্থাপনা যা লোক চক্ষুর অন্তরালে রয়েছে সেটি জনসম্মুখে আসতে পারে এবং দর্শনীয় স্থাপনা হতে পারে বলে স্থানীয়রা মতামত ব্যক্ত করেছেন এবং তারা এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।

মসজিদটির বিবরণ:
মসজিদটির আকৃতি প্রায় বর্গাকার (দৈর্ঘ্য ও প্রস্থে ১০-১২ ফুট প্রায়)। চারকোণে গোলকার চারটি পিলার মাটি থেকে ছাদ অবদি পৌঁছেছে (জায়গায় জায়গায় ক্ষয়/ভেঙে গেছে), যার চূড়ায় চারটি মিনার ছিল (ভেঙে পড়েছে)। উপরে প্রায় পুরো ছাদ জুড়ে একটি গম্বুজ ছিল (যা বর্তমানে নেই, ভেঙে পড়েছে)। উঁচ্চতা, মাটি থেকে ২০ ফুটের বেশি (আনুমানিক)। মসজিদটির চারদিকে চারটি দরজা বা প্রবেশ পথ রয়েছে। দরজার উঁচ্চতা ৫ ফুট এবং প্রস্থে ৩ ফুট প্রায়। মসজিদের দেয়াল ২০ ইঞ্চি পুরু, পোড়া টালি চুন-শুড়কির গাঁথুনি। এছাড়াও কিছু কারুকার্য দেখে মনেহয় মসজিদটি একসময় দৃষ্টিনন্দন ছিল। সব মিলিয়ে অপূর্ব নির্মাণ শৈলীর ছাপ লক্ষনীয়।

অবস্থান ও যাতায়াত: বরিশাল জেলার বাবুগঞ্জ উপজেলার মুশুরিয়া গ্রামে। গুঠিয়া ব্রিজের আগে দারোগার হাট এর মাঝ থেকে দক্ষিণে ৪ কিলোমিটার দূরত্বে। পিচ ঢালাই রাস্তা মসজিদটির পাশ ঘেষে গিয়েছে। রিক্সা-ভ্যান, অটো, মটর সাইকেল প্রাইভেট কার যোগে যাতায়াত করা যায় স্বাচ্ছন্দ্যে।

প্রতিবেদক: মোঃ সাইফুল ইসলাম ও নওরোজ কবির (টুকু)

বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন-০১৮২২৮১৫৭৪৮

Md Saiful Islam