রোজ শনিবার, ১৮ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৪ঠা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, রাত ১১:২৩


					
				
বাবা রিকশা চালক হওয়ার অপরাধে তালাক প্রাপ্ত হওয়া সুমি চান্স পেলেন রংপুর মেডিকেল কলেজে।

বাবা রিকশা চালক হওয়ার অপরাধে তালাক প্রাপ্ত হওয়া সুমি চান্স পেলেন রংপুর মেডিকেল কলেজে।

ধানসিঁড়ি অনলাইন নিউজ ডেস্ক //মেয়ে সরকারি মেডিকেল কলেজে পড়ার সুযোগ পাওয়ার খবরে কেঁদে ফেলেন রিকশা চালক বাবা গোলাম মোস্তফা। কারণ রিকশা চালানোর কারণেই মেয়েকে বিয়ে দেয়ার তিন মাস পর সংসার ভেঙ্গেছে। আর সেই থেকে তাঁর প্রতিজ্ঞা ছিল শতকষ্ট হলেও মেয়েকে উচ্চ শিক্ষিত করার। আল্লাহ তার সেই আশা পূরণ করলেও রিকশা চালিয়ে মেয়ের এমবিবিএস পড়ার খরচ চালানো নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে তার।

জয়পুরহাট সদর উপজেলার নিভৃত পল্লী কয়তাহার গ্রামের হতদরিদ্র গোলাম মোস্তফা পেশায় একজন রিকশা চালক। স্ত্রী তাহমিনা বেগম গৃহিনী। দুই মেয়ের মধ্যে শারমিন আক্তার সুমি ছোট। বড় মেয়েকে নবম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় বিয়ে দিয়েছেন। সুমি এবার কালাই সরকারি মহিলা কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ ৫ পেয়ে উর্ত্তীন হয়েছে। এবারের এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় ৭৭.০৫ স্কোর নিয়ে রংপুর মেডিকেল কলেজে পড়ার সুযোগ পায় অদম্য মেধাবী সুমি। মেডিকেলে কোচিং করার জন্য টাকা দিতে পারেননি গোলাম মোস্তফা।

মেয়ের এমবিবিএস পড়ার সুযোগ লাভের খবরে চোখের পানি ধরেও রাখতে পারেননি পিতা গোলাম মোস্তফা। মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার পরে রিকশা চালকের মেয়ে হওয়ায় তাকে গ্রহণ করেনি ছেলে পক্ষ। বিয়ের তিন মাস পর গত বছরের ১২ সেপ্টেম্বর তালাক দেয়া হয়। বিয়ের মেহেদি মুছতে না মুছতে তালাক পত্র পেয়ে কেঁদেছিল মেয়ে শারমিন আক্তার সুমির সঙ্গে পিতা গোলাম মোস্তফাও। আর তখন থেকেই ঘুরে দাঁড়ানোর শপথ নেয় সুমি।

ছোট বেলা থেকেই সুমি ছিল মেধাবী। কোন প্রাইভেট ছাড়াই এসএসসিতে গোল্ডেন জিপিএ ৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হওয়ায় পর বৃত্তিও লাভ করে। ভর্তি হয় রাজশাহী সরকারি কলেজে। কিন্তু অর্থাভাবে রাজশাহী ছেড়ে বাড়ি এসে স্থানীয় কালাই সরকারি মহিলা কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হয় সুমি। বাড়ি থেকে কলেজের দুরত্ব প্রায় ২৫ কিলোমিটার। তাই অধিকাংশ সময় বাড়িতেই লেখাপড়া করে জিপিএ ৫ পেয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায়ও উত্তীর্ণ হয় সুমি।

ছোট বেলা থেকেই তার ইচ্ছে ছিল ভালো চিকিৎসক হওয়ার। কিন্তু মেডিকেল কোচিং করার মত সামর্থ না থাকায় সুমি প্রস্তুতি নেয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার। এ অবস্থায় কোন প্রস্তুতি ছাড়াই মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে সুমি ৭৭ দশমিক ৫ স্কোর পেয়ে রংপুর মেডিকেল কলেজে এমবিবিএস পড়ার যোগ্যতা অর্জন করেন।

রবিবার সকালে জয়পুরহাট সদর উপজেলার কয়তাহার গ্রামে খোঁজ নিতে গিয়ে কথা হয় সুমির বাবা গোলাম মোস্তফার সাথে। তিনি বলেন,‘নিজের জমি-জমা নেই। মেয়েটা পড়ালিখা করছে। ছোট বেলা থেকেই ও মেধাবী। ওর পড়ালিখা ছাড়াও সংসারের খরচ চালানোর জন্য আমি রিকশা চালায় সিলেট শহরে। অভাব-অনটনের জন্য গত বছর মেয়েটাকে ভালো ঘর-বর পেয়ে বিয়েও দিয়েছিলাম। কিন্তু আমি রিকশা চালায় জন্য ছেলে পক্ষ মাত্র তিন মাসের মাথায় মেয়েটাকে তালাক দেয়। মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়লেও লেখাপড়া চালিয়ে যায় সুমি।

সুমি ডাক্তারি পড়ার সুযোগ পেয়েছে জেনে গ্রামবাসি খুবই আনন্দিত। স্থানীয় মাধাই নগর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এনামুল হক বলেন,‘সুমি অত্যন্ত মেধাবী শিক্ষার্থী। স্কুলের প্রতিটি পরীক্ষায় সুমির অর্জন ছিল শতভাগ নম্বর। সুমি বলেন, নিজের চেষ্টায় চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন পূরণের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেও অর্থাভাবে তা ভেস্তে যায় কি-না তা নিয়ে কুল কিনারা পাচ্ছি না। জানিনা চিকিৎসক হয়ে মানুষের সেবা করার স্বপ্ন আদৌ পূরণ হবে কি-না’।

বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন-০১৮২২৮১৫৭৪৮

Md Saiful Islam